নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহী সদর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-এলএসডি) আবদুর রহিম সহকর্মী খাদ্য কর্মকর্তা মাজেদুল ইসলামকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় খাদ্য কর্মকর্তা মাজেদুল নগরীর চন্দ্রিমা থানায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছেন।
আবদুর রহিমের বিরুদ্ধে গম কেলেঙ্কারি, নারী সহকর্মীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ এবং দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদ অর্জনসহ সাতটি অনিয়মের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ওঠে। বিভাগীয় তদন্তে এসব অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর খাদ্য অধিদফতরের তৎকালীন মহাপরিচালক বদরুল হাসান তাকে চাকরি থেকে অপসারণের নির্দেশ দেন।
এদিকে আবদুর রহিমের বিরুদ্ধে সরকারি নির্দেশ অমান্য করে মাজেদুল ইসলামের কাছে ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা দায়িত্ব হস্তান্তর না করারও অভিযোগ উঠেছে। এনিয়ে কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জিডিতে উল্লেখ করা হয়, রাজশাহী সদর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রহিমের অনুসারী নিরাপত্তা কর্মী মোসা. রুমানা গত ১১ জুন রাতে মাজেদুল ইসলামকে ফোন দিয়ে খাদ্য গুদামে না যাবার জন্য বলেন। খাদ্য গুদামে গেলে মাজেদুলকে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি প্রদান করেন। মাজেদুলকে মেরে ফেলা হলে খাদ্য গুদামের কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী সাক্ষী দেবেন না বলেও ফোনে জানান। জিডিতে আবদুর রহিমের নির্দেশে জীবননাশসহ বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন মাজেদুল ইসলাম।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ মার্চ রাজশাহী বিভাগের আঞ্চলিক খাদ্য কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান তানোর উপজেলা থেকে খাদ্য পরিদর্শক মাজেদুল ইসলামকে রাজশাহী সদর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসাবে বদলির লিখিত নির্দেশ দেন। একই আদেশে সদর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রহিমকে বাগমারার তাহেরপুর খাদ্য গুদামে বদলি করা হয়। এরপর গত তিনমাস মাজেদুল ইসলামকে সদর খাদ্য গুদামে যোগদান করতে দেন নি আবদুর রহিম। অবশেষে ১ জুন তিনি যোগদান করেন। কিন্তু আবদুর রহিম দায়িত্ব হস্তান্তর করছেন না। তিনি তাহেরপুর খাদ্য গুদামেও যোগদান করছেন না। ফলে মাজেদুল ইসলাম এখন পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব বুঝে পান নি।
খাদ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ৩১ অক্টোবর থেকে রাজশাহী সদর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন আবদুর রহিম। এ সময়ের মধ্যে তাকে দুইবার বরিশাল এবং খুলনায় বদলির আদেশ দেয়া হয়। কিন্তু উচ্চ আদালতে রিট করে তিনি রাজশাহী সদর খাদ্য গুদামেই ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্বে রয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, এসময় আবদুর রহিম খাদ্য অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ‘ম্যানেজ’ করেন। পরবর্তীতে একই বছরের ৭ নবেম্বর এক চিঠিতে মহাপরিচালক খাদ্য কর্মকর্তা রহিমের একটি বার্ষিক বর্ধিত বেতন (ইনক্রিমেন্ট) তিন বছরের জন্য স্থগিত করে তাকে ‘লঘুদণ্ড’ প্রদান করেন।
জানা গেছে, আবদুর রহিমের রাজশাহী, নওগাঁ, পাবনা ও নাটোরে রয়েছে বিপুল সম্পত্তি। নগরীর শিরোইল বাসটার্মিনাল মার্কেটে স্ত্রীর মালিকনায় রয়েছে কয়েক কোটি টাকার আবাসিক হোটেল। নগরীর নওদাপাড়া ট্রাকটার্মিনালে রয়েছে ৪০টি দোকান, যার মূল্য কয়েক কোটি টাকা। নগরীতে রয়েছে চারটি বাড়ি ও ছয়টি প্লট। এছাড়া নাটোরের লালপুরে শ্বশুরবাড়ি এলাকায় রয়েছে শতাধিক বিঘা জমি। আবদুর রহিমের বিরুদ্ধে বদলি বাণিজ্য, চাকরি দেয়ার নামে টাকা নিয়ে প্রতারণা, চেক জালিয়াতিসহ অসংখ্য অভিযোগও রয়েছে। খাদ্য কর্মকর্তা মাজেদুল ইসলাম বলেন, আমার বদলির আদেশ মার্চের প্রথম সপ্তাহে হয়েছে। এরপরও তিনমাস যোগদান করতে পারি নি। অবশেষে গত ১ জুন যোগদান করেছি। কিন্তু দায়িত্ব হস্তান্তর করছেন না আবদুর রহিম।
এ ব্যাপারে আবদুর রহিমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবদুস সালাম বলেন, প্রাণনাশের হুমকির বিষয়টি তিনিও শুনেছেন। এ ব্যাপারে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। আর দায়িত্ব হস্তান্তরের বিষয়ে কিছুটা জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। ঈদের পরে এ সমস্যার সমাধান হবে।