নিজস্ব প্রতিনিধিঃ মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কের গোদাগাড়ী উপজেলা সদর। সড়কটি গোদাগাড়ী উপজেলার উপর দিয়ে দুই জেলার মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করেছে। শুধু এই সড়কে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির পাঁচদিনে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসেই ১২জনের মৃত্যু হয়। এসব দুর্ঘটনায় আরো ২০ জন আহত হয়েছেন।
২৯ ফেব্রুয়ারি এই সড়কে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় একই পারিবারের চারজনসহ ৮ জনের মৃত্যু হয়। এনিয়ে পুলিশ বলছেন, প্রাইভেটকারটিতে অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। আর দুর্ঘটনার পরে স্থানীয়রা বলছেন, ‘চালকের কানে হ্যাড ফোন ছিলো।’ তবে সড়ক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সড়কটি প্রশস্ত নয়। এছাড়া উঁচু-নিচু। সড়কে বাঁক থাকার কারণে নিয়ন্ত্রণে হারায় অনেক যানবাহন। এতে ঘটে প্রাণহানির ঘটনা।
স্থানীয়দের বরাত ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গোদাগাড়ীর পরিবহন সংশ্লিষ্ট কর্মীরা বলছেন, গাড়িটি পুরানো মডেলের। হয়তো গিয়ার বক্সে কাজ করেনি। হতে পারে ব্রেক ফেল (চালকের নিয়ন্ত্রণের বাইরে) হয়েছে। এই দুই বিষয় ছাড়া প্রাইভেটকারটি ফাঁকা সড়কে বিপরীত সাইডে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগার কথা নয়। যদিও গোদাগাড়ী ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট জগদীশ অতিরিক্ত ওভার লোডিং কে দায়ি করেছেন। এছাড়া সড়ক উঁচু-নিচু এবং গাড়ি দ্রুতগতি থাকায় সামনের চাকা হাওয়ায় ভেসে যায়।
এবিষয়ে রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ইফতেখায়ের আলম বলেন, ধারণা করা হচ্ছে প্রাইভেটকারটিতে অতিরিক্ত যাত্রীই দুর্ঘটনার কারণ। গাড়ির ক্ষয়ক্ষতি দেখে মনে হচ্ছে, কারটি দ্রুতগতিতে চলছিল।
তিনি বলেন, রাজশাহী-গোদাগাড়ী সড়কে পুলিশের কয়েকটি চেকপোস্ট রয়েছে। সেখানে গাড়ির কাগজপত্র দেখা হয়। এই চেকপোস্টগুলোতে যানবাহনের সিট ক্যাপাসিটি (বসার ধারণ ক্ষমতা) দেখা হবে। প্রয়োজনে মামলাও দেয়া হবে। সব মিলে ট্রাফিক আইন মেনে চললে দুর্ঘটনা অনেক কমে যাবে।
চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি গোদাগাড়ীর বিজয়নগর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নসিমন উল্টে খাদে পড়ে শরীফুল ইসালাম (৪৮) নামে এক মাছ ব্যবসায়ী নিহত হন। নিহত শরীফুল উপজেলার রিশিকুল ইউনিয়নের মান্ডইল গ্রামের ইয়াসিন আলীর ছেলে। এ ঘটনায় নসিমন চালক লালন শেখ (৩৪) আহত হন।
গত ২৪ জানুয়ারি গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়িতে সড়ক দুর্ঘটনায় আকরাম হোসেন (৪৮) নামে এক কলেজ শিক্ষক নিহত হন। এ দুর্ঘটনায় জকিম উদ্দিন (৪০) নামে এক রিকশাচালকও আহত হন। এছাড়া ২০ জানুয়ারি গোদাগাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন আনসার সদস্য। পরে রামেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি সকালে গোদাগাড়ী উপজেলার সাধুর মোড় এলাকায় মাইক্রোবাসের ধাক্কায় আব্দুল আলিম সোহাগ (১২) ও সুমন (১১) নামে দুই শিক্ষার্থী নিহত হন। এ দুর্ঘটনায় জাহিদ হোসেন (১০) নামে আরেক শিশু আহত হয়। তারা উপজেলার নবগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ছিলো।
সর্বশেষ, শনিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) গোদাগাড়ীর কাদিপুর এলাকায় প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগলে ঘটনাস্থলে তিনজের মৃত্যু হয়। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে আরো চারজনের মৃত্যু হয়। এছাড়া ঘটনার পরের দিন শুক্রবার আরো একজনের মৃত্যু হয়।
গোদাগাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খাইরুল ইসলাম বলেন, এবিষয়ে থানায় মামলা হয়েছে। এছাড়া গাড়ি জব্দ করা হয়েছে।