আভা ডেস্ক: দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো রাজশাহীর বুটিক শিল্পের অবস্থাও নাজুক। যে আশা নিয়ে কাজ করছেন তার নিছকই পূর্ণ হচ্ছে বলে জানান রাজশাহীর বুটিক শিল্প উদ্যোক্তারা। এজন্য রাজশাহীর বাইরে ঢাকা ময়মনসিংহ, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় চলে যাচ্ছে তাদের শিল্প। গত ১০ জুন ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে বেচাকেনা কেমন হচ্ছে জানতে গেলে রাজশাহীর বিভিন্ন বুটিক মালিকের সাথে কথা বলে এসব তথ্য উঠে আসে।
রাজশাহী উপশহর নিউমার্কেট এলাকার রঙরেজিনীর সত্ত্বাধিকারী আফরোজা আজিজ মুন্নী জানান, আসলে আমরা বুটিক শিল্পকে নিয়ে যতটুকু স্বপ্ন দেখি সেটা তো বাস্তব হচ্ছেনা। আমরা যে স্বপ্ন দেখি বাংলাদেশি শিল্পকে নিয়ে, ফ্যাশনকে নিয়ে, আসলে এখনো সে লক্ষ্যে পৌছাতে পারছিনা। ইন্ডিয়া, পাকিস্তান আর চাইনিজ পোশাকে ছেয়ে গেছে দেশের বাজার। আমাদের প্রত্যেকটা মানুষই আসলে বাইরের দেশের পোশাকের প্রতি দুর্বল।
দেশপ্রেম বা দেশীয় চেতনা এখন আর আমাদের মাঝে সেভাবে কাজ করেনা। রাজশাহীতে বেচাকেনা কেমন জানতে চাইলে তিনি জানান, যারা দেশকে ভালবাসে তারা আসেন আমাদের এখানে । তবে এ সংখ্যাটা খুব কম। আমাদের ব্যবসা যে খুব তুঙ্গে তা নয়, তবে টিকে আছি। চলে যাচ্ছে ।
একই এলাকার ইউটোপিয়া বুটিক এন্ড ফ্যাশন হাউজের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, আমি মূলত অর্ডারের কাজ করি আর বাইরে সেল করি। রাজশাহী কেন্দ্রিক ব্যবসা খুব কম।
এ শিল্পের উন্নয়নে কোনো প্রচারণা চালানো হয় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমরা প্রচারণা তো চালাই কিন্তু ইন্ডিয়ান আর চাইনিজ পোশাকের আগ্রাসনে আমাদেরটা খুবই কম। ২০০৯ সালে ব্যবসা শুরু করা উপশহর কয়েরদাড়া এলাকার সূচিতা বুটিক প্রতিষ্ঠানটিও ঢাকামুখী।
এ বুটিকের স্বত্বাধিকারী জানান, আমার তেমন বড় ব্যবসা না। তবে আমি নিয়মিতভাবে ঢাকা, দিনাজপুর, কুষ্টিয়াসহ পাঁচ-সাতটি এলাকায় মাল সাপ্লাই দিই। আর রাজশাহীতে খুব কমই বিক্রি হয়।
নগরীর সপুরা এলাকার মিনু বুটিকের মালিক তাহমিনা আক্তার মিনু জানান, আমাদের ব্যবসা ভাল হয়। কিন্তু রাজশাহী কেন্দ্রিক যে চাহিদা থাকবে বলে আশা করি তা থাকেনা। আমরাও ঢাকাসহ দেশের ১০-১৫টি জেলায় অর্ডার সাপ্লাই দেই। উপশহর কয়েরদাড়া এলাকার আরেকটি বুটিক হচ্ছে মাইশা বুটিক এন্ড ফ্যাশন হাউস।
এ বুটিকের সত্ত্বাধিকারী মিসেস আমেনা বেগম বলেন, চাকরি ছাড়ার পর ভাবলাম বসে থেকে লাভ নাই। তাই বুটিকের কাজ শুরু করলাম। এ শিল্পের কাজ করে আমি বেশ ভাল আছি। তবে একটা কথা সত্য যে, রাজশাহীতে বেচাকেনা নাই বললেই চলে। দু’চারটা টুকটাক কাস্টমার আসে। তাই আমি দেশের বিভিন্ন স্থানে অর্ডারের মাল সাপ্লাই দেয়া শুরু করি।
তিনি জানান, রাজশাহীর তানোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বিনোদপুর এলাকায় আমার প্রায় ১০০ জন শ্রমিকের কাজ করে। ক্রেতা না থাকায় এখন সে বুটিক চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। নাজুক অবস্থা আর রাজশাহীকেন্দ্রিক চাহিদা কম থাকা সত্ত্বেও উদ্যোক্তারা এ শিল্পকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন।
রঙরেজিনীর সত্ত্বাধিকারী মুন্নী বলেন, আমরা চাই ব্যবসার পাশাপাশি দেশের ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে। যাতে আমরা বাঁচি, দেশ বাঁচে, দেশের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা আসে। যতই চাহিদা কম থাকনা কেন আমরা আশা রাখি এটা একসময় যথাযথ শিল্পে পরিণত হবে।