রাজশাহীতে সাংবাদিককের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত।

আবুল কালাম আজাদঃ  সংবাদ প্রকাশের কারণে ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ও রাজশাহীর স্থানীয় দৈনিক সোনালী সংবাদের সম্পাদক মো. লিয়াকত আলীসহ আট সাংবাদিকের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে দায়ের করা মামলার অভিযোগপত্র দাখিলের ধিক্কার জানিয়েছেন সাংবাদিকরা। একইসঙ্গে তারা অনতিবিলম্বে মামলাটি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক কাজী জাহিদ ২০১৫ সালে মামলাটি দায়ের করেন। গত সেপ্টেম্বরে নগরীর মতিহার থানা পুলিশ মামলাটির অভিযোগপত্র দাখিল করেছে। এরপর দৈনিক যুগান্তরের রাবি প্রতিনিধি মানিক রাইয়ান বাপ্পীকে গ্রামের বাড়ি থেকে এরই মধ্যে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।

এর প্রতিবাদে ১৬ নভেম্বর সোমবার সকালে রাজশাহী নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন সাংবাদিকরা। রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন (আরইউজে) এর আয়োজন করে।

এতে সভাপতিত্ব করেন আরইউজে সভাপতি কাজী শাহেদ। পরিচালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হক।

মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ। তিনি বলেন, যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল ইসলাম জাতীয় প্রেসক্লাবেরও সভাপতি। আর সোনালী সংবাদ সম্পাদক লিয়াকত আলী রাজশাহীর প্রবীণ ব্যক্তিত্ব। প্রগতিশীল এসব মানুষদের বিরুদ্ধে মামলা গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। এটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর আঘাত। উন্নয়নের চলমান ধারা বাধাগ্রস্ত করতে সাংবাদিকদের বেকায়দায় ফেলে সরকারকে সমালোচিত করার চেষ্টা চলছে। মামলাটির সঠিক তদন্ত হলে সাংবাদিকরা অব্যাহতি পাবেন।

তথ্যপ্রযুক্তি আইনকে ‘কালা কানুন’ উল্লেখ করে সামাজিক সংগঠন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, একটি গণতান্ত্রিক দেশে কালা কানুন কেন? এই দেশে কালো আইনের দরকার নেই। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে করা মামলাটি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, সাংবাদিকরা জাতি গঠনে কাজ করে যান। কালা কানুনে যদি তাদেরই হয়রানির শিকার হতে হয় তাহলে এর চেয়ে লজ্জার আর কিছু নেই। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাই তিনি যেন আইনটি বাতিল করেন। কারণ, তিনি ছাড়া আর কোন অভিভাবক নেই।

আরউজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি প্রবীণ সাংবাদিক মুস্তাফিজুর রহমান খান আলম বলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার উপযুক্ত স্থান বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল। কিন্তু কাজী জাহিদ মামলা করেছেন থানায়। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সহ-সভাপতি মামুন-অর-রশিদ বলেন, রাবির যে শিক্ষক আইসিটি আইনে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন সেই শিক্ষকই আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিমকে নিয়ে অপপ্রচারের জন্য এই আইনে গ্রেপ্তার হয়ে জেল খেটেছেন। তিনি নিজেই আইন মানেন না। আর তিনি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যে মামলা করেছেন তাতে পুলিশ প্রভাবিত হয়ে অভিযোগপত্র দিয়েছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। ধিক্কার জানাই।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম বাবু বলেন, মামলার অভিযোগপত্র দাখিলের আগে তদন্ত কর্মকর্তা বিবাদীদের সঙ্গে কথা বলেননি। সম্পূর্ণ একপেশে মনোভাব নিয়ে তিনি বাদীর কথামতো অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন। কিন্তু মামলা দিয়ে সাংবাদিকদের প্রতিরোধ করা যায় না। অতীতে না, কখনও এটা সম্ভব হয়নি, আগামীতেও হবে না।

আরইউজে সভাপতি কাজী শাহেদ বলেন, সরকার বার বার সাংবাদিকদের আশ্বস্থ করেছে আইসিটি আইনে সাংবাদিকদের হয়রানি করা হবে না। কিন্তু বাস্তবতা তার উল্টো। একজন শিক্ষক আইসিটি আইনে শুধু সম্পাদকদের বিরুদ্ধেই মামলা করেননি, তিনি নিজের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধেও মামলা করেছেন। তার মধ্যে যদি শিক্ষকসুলভ কোন আচরণ থাকে, তাহলে তিনি আজই মামলা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেবেন।

সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হক বলেন, শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের কাছে নিজের সন্তানের মতো। কিন্তু কাজী জাহিদ কেমন শিক্ষক, তিনি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন! এই মামলা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আমরা মাঠে থাকব।

কর্মসূচিতে রাবি রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আরাফাত রহমান বলেন, শিক্ষক কাজী জাহিদ আইসিটি আইনের মামলায় ৭১ দিন কারাগারে ছিলেন। আমরা তখনও এই কালো আইন বাতিল করার দাবি জানিয়েছিলাম। এখন তিনিই এই কালো আইনে সাংবাদিকদের হয়রানি করছেন। আমরা মনে করি তার নৈতিক স্থলন ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত কোন সাংবাদিক এই প্রথম তার মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

কর্মসূচিতে একাত্মতা ঘোষণা করে উপস্থিত হয়েছিলেন রাজশাহী অ্যাডভোকেট বার সমিতির সাধারণ সম্পাদক পারভেজ তৌফিক জাহিদী, রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু, নগর আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক তৌফিক আলী ভাদু, রাজশাহী সংবাদপত্র কর্মী পরিষদের সভাপতি রেজাউল করিম রেজা, বাংলাদেশ রেশম শিল্প মালিক সমিতির সহ-সভাপতি নিলুফার ইয়াসমিন নিলা, ওয়েবের রাজশাহীর সভাপতি আনজুমান আরা লিপি, রাজশাহী বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী আবদুল মালেক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের রাজশাহীর সহ-সভাপতি সেলিনা বেগম প্রমুখ।

আরও বক্তব্য দেন রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি বাবর মাহমুদ। উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় দৈনিক সোনার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আকবারুল হাসান মিল্লাত, সোনালী সংবাদের নির্বাহী সম্পাদক মাহমুদ জামাল কাদেরী, বার্তা সম্পাদক আবদুল করিম, বিএফইউজে সদস্য জাবীদ অপু, আরইউজের কোষাধ্যক্ষ সরকার দুলাল মাহবুব, যুগ্ম সম্পাদক সাইফুর রহমান রকি, নির্বাহী সদস্য মিজানুর রহমান টুকু, সামাদ খান, সিনিয়র সাংবাদিক আবুল কালাম আজাদ, সিনিয়র ফটোসাংবাদিক আজাহার উদ্দিন, সিনিয়র সাংবাদিক শ.ম সাজু, আনিসুজ্জামান, রফিকুল ইসলাম, আবরার শাঈর, আবদুস সাত্তার ডলার, শামীম হোসেন, তৈয়বুর রহমান প্রমুখ।

Next Post

নন্দীগ্রাম পৌর আওয়ামীলীগের বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত

সোম নভে. ১৬ , ২০২০
নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ বগুড়ার নন্দীগ্রামে গত ১৬ই নভেম্বর বিকেল ৪টায় নন্দীগ্রাম পৌর আওয়ামীলীগ দলীয় কার্যালয়ে বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। নন্দীগ্রাম পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও পৌরসভার প্যানেল মেয়র আনিছুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মুকুল হোসেন মুকুল এর সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links