আভা ডেস্কঃ ভারতের এনআরসি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের নির্বিকার ভূমিকা ‘দেশের জনগণ, সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্রবিরোধী অবস্থান’ বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
রোববার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই অবস্থানের কথা জানান।
তিনি বলেন, নাগরিকত্ব সংশোধন আইনকে অগণতান্ত্রিক, বৈষম্যমূলক, অসাংবিধানিক, মানবতাবিরোধী আখ্যায়িত করে সারা ভারতে এখন প্রতিবাদ চলছে। কোথাও কোথাও এই প্রতিবাদ সহিংসতা রূপ নিয়েছে। কেবল সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়কে টার্গেট করেই এই আইন প্রণীত হয়েছে আজ জনমনে বিশ্বাস স্থাপিত হয়েছে।
এ দিকে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন নিয়ে বিএনপিকে দোষারোপ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ এবং ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রাবীশ কুমারের বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ভারতের লোকসভায় সদ্য পাস হওয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন সম্পর্কে দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
এতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আসামের গোয়ালপাড়ায় ইতিমধ্যেই ডিটেশন সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছে। সারা ভারতে আরও অনেক ডিটেশন সেন্টার নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এমনিতেই ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়ে বাংলাদেশ ভারাক্রান্ত। এর ওপর এনআরসির উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার তাদের ব্যর্থ পররাষ্ট্রনীতির প্রমাণ হিসেবে যেভাবে নির্বিকার রয়েছে, তা স্পষ্টতই আমাদের জনগণ, সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্রবিরোধী অবস্থান।
সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার যতই এনআরসিকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে সাফাই গাইতে থাকুক না কেন সম্প্রতি বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে সন্তপর্ণে (সাবধানে) এবং কখনও বা খোলামেলাভাবে বাংলা ভাষাভাষী মুসলিমদের বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পুশ-ইন চলছে। যার বিরুদ্ধে খোদ ভারতেই প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের পাশাপাশি বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। প্রকৃতপক্ষে মিয়ানমার যেমন রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে নির্যাতনের মুখে রোহিঙ্গাদের স্টেটলেস করে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য করেছে, একইভাবে নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসি জটিলতায় সংখ্যালঘু ভারতীয় মুসলিমদের স্টেটলেস ঘোষণা করে জোর করে বাংলাদেশে পুশ-ইন করার প্রক্রিয়া আমরা লক্ষ্য করছি। বাস্তবিক অর্থে এনআরসি ইস্যুতে মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং ভারত থেকে সীমান্ত দিয়ে জোরপূর্বক ঢুকিয়ে দেয়া সংখ্যালঘু ভারতীয় মুসলিমদের মধ্যে কোনো মৌলিক ব্যবধান নেই।
ফখরুল বলেন, কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কাছে বাংলাদেশের নাগরিক জনৈকা প্রিয়া সাহা নিজ দেশে সংখ্যালঘু নিপীড়নের যে নালিশ করছে, যা বাংলাদেশের আপামর জনগণকে বিক্ষুব্ধ করেছে। প্রধানমন্ত্রী যার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তার সব কিছুর সঙ্গেই ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের একটি যোগসূত্র পাওয়া যায়।
সংখ্যালঘুদের বিষয়ে বাংলাদেশ ও বিএনপির অবস্থান তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ঐতিহ্যগতভাবে একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান থেকে শুরু করে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সরকারের সময় বরাবরই বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অক্ষুণ্ণ ছিল। এমনকি বাবরী মসজিদ সংকট এবং গুজরাট-দাঙ্গার সময়ও খালেদা জিয়ার আমলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় ছিল। এক কথায় বলতে গেলে বিএনপি সব আমলেই তার সরকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রাখতে সফল হয়েছে।
যুগান্তর