উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে যমুনা নদীতে ব্যাপক হারে ভাঙন শুরু হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ও দমকা হাওয়ায় নদীতে প্রচণ্ড ঢেউয়ের আঘাতে এ ভাঙন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
ফলে শাহজাদপুরের গালা,সোনাতুনি,কৈজুরি,খুকনি ও জালালপুর ইউনিয়নের ১০টি গ্রামে এ ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ ভাঙনের কবলে পড়েছে বাড়িঘর, দোকানপাট, মসজিদ, আবাদি জমি ও প্রাথমিক বিদ্যালয়।
ফলে বাড়িঘর ভিটেমাটি হারিয়ে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। ভাঙন আতঙ্কে এখানকার মানুষেরা প্রতিদিন নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছেন পাশের বাঁধ অথবা উঁচু জায়গায়। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
ভাঙনকবলিত এলাকাবাসীর অভিযোগ, সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড গত বছরের ভাঙন এলাকা মেরামত না করায় এবং এ বছর কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়ায় এই ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে।
ভাঙনে ভিটেমাটি ও আবাদি জমি হারিয়ে পাগলপ্রায় আমজাদ হোসেন জানান, ভাঙনের চিন্তায় রাতে ঘুমাতে পারি না।
কৈজুরি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম জানান, নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যহত থাকায় স্রোত তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফলে শাহজাদপুরের যমুনা নদীর তীর এলাকায় ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। এ ভাঙনের কবল থেকে তীরসংরক্ষণ বাঁধও রক্ষা পাচ্ছে না। ফলে শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরি ইউনিয়নের ভাটপাড়া,গুদিবাড়ি,জগতলা তীর সংরক্ষণ বাঁধের তিনটি স্থানের প্রায় ৪০০ ফুট এলাকা ধসে গেছে। এ ছাড়া এ ইউনিয়নের পাচিল ও ঠুটিয়া এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।
জালালপুর ইউনিয়নের পাকুরতলা, ভেকা, বাঐখোলা, খুকনি ইউনিয়নের আরকান্দি ও ব্রাহ্মণগ্রামে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। গত কয়েক দিনের ভাঙনে কমপক্ষে শতাধিক বাড়িঘর ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
এ দিকে বুধবার সকালে গুদিবাড়ি ও জগতলা গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, তীরসংরক্ষণ বাঁধের সিসি ব্লক পানির ধাক্কায় ধসে পড়ছে। তীরবর্তী বাড়িঘরের লোকজন বাঁশ-চাটাই দিয়ে সাময়িকভাবে এ ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছে।
এলাকাবাসী জানায়,সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো প্রকার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় তারা এবারও ভাঙনের কবলে পড়েছে। এখনও এ ভাঙনরোধে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় তারা চরম আতংকে দিন কাটাচ্ছে।
এলাকাবাসী আরও জানায়, এ ভাঙ্গন রোধে গত ছয় বছর আগে ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে শাহজাদপুরের কৈজুরী থেকে বেনুটিয়া পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার এলাকায় তীরসংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। গত ৪ বছর ধরে এ বাঁধে কোনো সংস্কারকাজ না করায় বাঁধের বিভিন্ন স্থান দুর্বল হয়ে পড়েছে। ওই সব দুর্বল স্থানে লিকেজ সৃষ্টি হওয়ায় সেখানে নতুন করে ধস দেখা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, টাকার সংকুলান না থাকায় আপাতত বাঁধ রক্ষায় কাজ করা যাচ্ছে না। তবে সাধ্য অনুযায়ী আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
যুগান্তর