মোহনপুরে নিরপরাধ ব্যক্তিকে আটক করে আওয়ামীলীগ নেতা বানাল পুলিশ

নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজশাহীর মোহনপুর থানায় সদ্য যোগদান করা ওসি আতাউর রহমানের বিরুদ্ধে নিরীহ মানুষকে আটক করে আওয়ামীলীগ নেতা বানিয়ে বিজ্ঞ আদালতে চালান দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

কেশরহাট পৌর সাবেক কাউন্সিলর মাদক সম্রাট ও বিএনপির কথিত নেতার খায়েশ পুরণ করতে
একজন নীরিহ মানুষকে আটক করে রাজনৈতিক মামলা দেওয়ায় থানা এলাকায় বইছে আলোচনা সমালোচনার ঝড়।

এলাকাবাসি ও থানাসুত্রে জানাযায়, ১১ ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার দিবাগত রাতে মোহনপুর থানার ওসিসহ সেকেন্ড অফিসার এসআই মোদাস্সের আলী সঙ্গীয় ফোর্স কেশরহাট নাকইল গ্রামের নিজ বাসা থেকে ইসাহাক আলী পিন্টু নামে একজনকে আটক করে। পিন্টু ওই এলাকার মৃত আবেদ আলীর ছেলে। এলাকাবাসি জানায় ইসাহাক আলী পিন্টু কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী না হলেও কেশরহাট পৌর সাবেক কাউন্সিলর কথিত বিএনপি নেতা ও পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের খুশি করতে তাকে পৌর আওয়ামীলীগ নেতা বানিয়ে চালান দেওয়া হয়েছে।
গোপন সুত্রে জানাগেছে, একাধিক মাদক মামলার আসামী, মাদক ব্যবসায়ী ও ভূমিদস্যু এক সাবেক পৌর কাউন্সিলর বিএনপি নেতা পরিচয়ে ইসাহাক আলী পিন্টুর জমি ও পুকুর দখল নিতে ব্যর্থ হয়ে ম্যানেজ করে পুলিশ দিয়ে বিনা অপরাধে পিন্টুকে আটক করা হয়। পিন্টুকে আটকের পর তার রাজনৈতিক কোন পদ পদবী না থাকলেও আওয়ামীলীগে ভোট দিয়েছে মর্মে মোহনপুর থানার এক রাজনৈতিক মামলায় সন্তিগ্ধ দেখান ওসি।

পিন্টুকে আটকের পর এলাকাবাসি জানায়, শুধুমাত্র জমিজমা সংক্রান্ত পূর্ব শত্রুতার জের ধরে স্থানীয় এক বিএনপি পন্থী কাউন্সিলের কথামতো মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে পুলিশ তাকে আটক করেছে। প্রভাবশালী ওই কাউন্সিলের ভয়ে এলাকায় কেউ মুখ খুলছে না। শুধু তাই নয় ইসাহাক আলী পিন্টুর ছোট ভাইয়ের বউ এর কথামতো সাবেক ওই কাউন্সিলর ও তার লোকজন পিন্টুকে তার পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বিতাড়িত করতে জোর পূর্বক ১০০ বাঁশ ও গাছ কেটে নেয়। এ ঘটনায় ইসাহাক আলী পিন্টুর মা মমেনা বেগম বাদি হয়ে মোহনপুর আমলী আদালতে মামলা করেন। (মামলা নং সি-৭১২/২০২৪) আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে মোহনপুর থানাকে তদন্তের আদেশ দেন। ওই মামলায় ইসাহাক আলী পিন্টু সাক্ষী ছিলেন। জমি-জমার বিরোধের জেরে তাঁকে আটক করা হয়েছে মর্মে পরিবার জানলেও তাকে রাজনৈতিক মামলা দিয়ে ফাঁসিয়েছে কাউন্সিলর ও পুলিশ।

মোহনপুর থানা বর্তমান ওসি আতাউরের বিরুদ্ধে বাগমারা থানায় ওসি থাকা কালে আটক বানিজ্যসহ জামায়াত-বিএনপি নিধনে কাজ করার অভিযোগ উঠেছিলো। সেসময় তিনি এমপি ইঞ্জি: এনামুল হকের নির্দেশে সকল অপকর্ম করতেন। ২০১৩ সালের মার্চ মাসের ৩ তারিখে গোদাগাড়ীতে আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর রায়কে কেন্দ্র করে জামায়াতের উপর গুলি বর্ষণকারী এই আতাউর রহমান। সে সময় জামায়াতে দুজন কর্মী পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। ওসি আতাউর রহমান সেসময় গোদাগাড়ি থানার সেকেন্ড অফিসার ছিলেন। এরপর ২০১৩ সালের ৪ মার্চ রাতে এস আই নুরুজ্জামান ও এস আই আতাউর রহমান (সেকেন্ড অফিসার বর্তমান মোহনপুর থানার ওসি) দুটি নাশকতা মামলাও করেন। ওই সময় গোদাগাড়ী থানার ওসি ছিলেন অহিদুল ইসলাম। ওই দুই মামলায় জামায়াত শিবিরের ২ হাজার করে মোট চার হাজার আসামী করা হয়। এর আগে ৩ মার্চ রফিকুল ইসলাম (১২) নামের এক কিশোরসহ দুজন জামায়াত-শিবির কর্মী নিহত হয় পুলিশের গুলিতেই। সে সময় অন্তত ১০ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছিলো। এক সময় এই আতাউর রহমান ছিলেন জামায়াত বিএনপির আতংক। ব্যাপক নির্যাতন করেছে জামায়াত বিএনপি’র সমর্থকদের। এখন তিনি আবারও পূর্বের ন্যায় সাধারণ মানুষকে আ”লীগ বানাতে ব্যস্ত।

কথা বললে মোহনপুর থানা অফিসার ইনচার্জ আতাউর রহমান বলেন, আটক ইসাহাক আ”লীগের ভোট করেছে। এটাই তাঁর অপরাধ। আ’লীগের কোনো পদে সে ছিলো না এটা সঠিক। ছোট একটা অজ্ঞাত মামলায় তার নাম দেওয়া হয়েছে। জামিন হয়ে যাবে। এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করারও অনুরোধ করেন তিনি। দলীয় কাউকে তো খুঁজে পাচ্ছি না। প্রয়োজনে আমি ইসাহাকের জামিনের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি, আমার লোকও আছে। (কল রেকর্ড সংরক্ষিত)

জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল আলম (মিডিয়া মুখ্যপাত্র) বলেন, আমরা তদন্তে পেয়েছি তিনি আ’লীগের পদধারী। এছাড়াও যদি আইও তদন্ত করে দেখেন যে আসলেই তিনি কোনো পদে ছিলেন না তাহলে তাঁকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।

পিন্টুর বিষয়ে জানতে চাইলে কেশরহাট পৌর বিএনপি সভাপতি ও সাবেক মেয়র আলাউদ্দিন আলো বলেন, এরা আ’লীগের সক্রিয় কেউ না। এদের কোনো পদ পদবী নাই। সাধারণ ভোটার পিন্টু। আ’লীগকে সমর্থন করতে পারে! আ’লীগকে ভোট দেয় বলে শুনেছি। তবে তাঁকে আটকের বিষয়টি আমাদেরকেও অবাক করেছে। যারা নাশকতা করলো, হত্যা, হামলা মামলাসহ লুটপাট করেছে সেসব আ”লীগের পদ পদবীধারী কাউকে গ্রেফতারে তেমন পদক্ষেপ দেখছি না৷ এর আগে জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে পিন্টুকে এক ঘরে করে দিয়েছিলো এলাকার শালিসি বৈঠকে।
উল্লেখ্য, ওসি আতাউর রহমান আ’লীগের আমলেই চাকুরী হয়েছে। তার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সদরে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ আ’লীগের এমপি আব্দুল ওয়াদুদু দারার আস্থাভাজন তিনি। তাঁর স্থানীয় বাড়ি আশে পাশের বাসিন্দারাও বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এছাড়াও তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা আ’লীগ রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত।

 

Next Post

নন্দীগ্রামে গ্রাম আদালত বিষয়ক কমিউনিটি মতবিনিময় সভা

বৃহস্পতি ফেব্রু. ১৩ , ২০২৫
নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধি: বগুড়ার নন্দীগ্রামে গ্রাম আদালত বিষয়ক কমিউনিটি মতবিনিময় সভা ও ভিডিও প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে।   এ উপলক্ষে ১৩ই ফেব্রুয়ারী (বৃহস্পতিবার) গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (৩য় পর্যায়) প্রকল্প স্থানীয় সরকার, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয় এর আওতায় ৩নং ভাটরা ইউনিয়ন পরিষদের হলরুমে অত্র ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) মাহাবুর রহমানের সভাপতিত্বে […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links