ফ্রান্সের সঙ্গে আর্জেন্টিনার সব ধরনের সম্পর্ক ভালো। একে অপরের সঙ্গে সব সময় সহযোগিতার হাত ধরে চলছে দুই দেশ। কিন্তু বিশ্বকাপ ফুটবলে আজ এমন এক পরিস্থিতি এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে আর্জেন্টিনা-ফ্রান্সের দ্বিপক্ষীয় রাষ্ট্রীয় বন্ধুত্বের কোনো মূল্য থাকবে না! রাশিয়ার কাজান স্টেডিয়ামের দুই গোলপোষ্টের মাঝে ১২০ গজে আর্জেন্টিনা-ফ্রান্সের ফুটবল লড়াই দুই দেশের শত বছরের পুরোন সম্পর্ক ভুলিয়ে রাখবে ৯০ থেকে ১২০ মিনিট পর্যন্ত। উভয় দল জানিয়ে দিয়েছে তারা ১২০ মিনিট পর্যন্ত খেলাটাকে নিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ কেউ কাউকে দেবে না। ৯০ নিমিটের আগেই নিশ্চিত করতে চায় কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার টিকিট।
নকআউট পর্বের এই ম্যাচ উভয় দলের জন্যই হবে অগ্নি পরীক্ষা। মেসি যাদু না ফরাসি চমকে মুগ্ধ হবে সারাবিশ্ব-সেটাই এখন দেখার বিষয়। দুই দলের ফুটবল লড়াই উপভোগ করার জন্য বাংলাদেশের কোটি দর্শকও মুখিয়ে আছে। সমর্থকদের প্রত্যাশা-সি গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স আজ ফরাসি ফুটবলের মোহনীয় সৌন্দর্য মেলে ধরবে। মেসি, মাচেরানো, ডি মারিয়াদের ঘায়েল করতে চমক দেখাবে মিশেল প্লাতিনি, জিনেদিন জিদানের উত্তরসূরী সেমুয়েল, পগবা, গ্রিজম্যান, অলিভার, রাফায়েলরা। ফ্রান্সের আছে তারুণ্যের শক্তি, আছে স্পিড। গ্রুপে দুর্দান্ত লড়াই করে ফ্রান্স খুব ভালো মুডে আছে। কোনো খেলায় হারেনি। অষ্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একটা মাত্র গোল হজম করলেও সেটি পেনাল্টি থেকে এসেছে।
অন্যদিকে আর্জেন্টিনার অভ্যন্তরে যতই কোন্দল থাকুক তারা যে কোন সময় জ্বলে উঠতে পারে, চোখ রাঙ্গানি দিতে পারে! ফ্রান্স সেই ছবিটা দেখেছে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে। কিভাবে ছোঁ মেরে খেলাটা নিয়ে গেল মেসিরা। ইউরোপীয়ান আর লাতিন আমেরিকার ফুটবলে পার্থক্য থাকলেও মেসিদের দলে যারা খেলেন তাদের সবাই প্রায় বছরজুড়ে ইউরোপের ক্লাব ফুটবলে খেলেন। তাই ইউরোপের পাওয়ার ফুটবলকে ঘায়েল করার মন্ত্রটা তাদের জানা থাকারই কথা। মেসি তো দুই দিন আগেই জানিয়েছেন ফ্রান্সের বিপক্ষে আর্জেন্টিনা ‘ফাইনাল ম্যাচ’ খেলবে। এ-ও বলেছেন দুই দলের ফিফটি ফিফটি চান্স থাকবে। মেসি যাই বলুক চাপে থাকবে তার দল।
রাশিয়ায় ভলগা ও কাজানাক নদীর তীর ঘেষে কাজান শহর। সবুজ নির্সগ ঘেরা এর স্টেডিয়াম। মস্কো কিংবা সেন্ট পিটারসবার্গে যেমন ঠান্ডা ছিল কাজানে ঠিক তার উল্টো, খুবই গরম। কাজান শহরে সাড়ে তিন লাখ মুসলিম বসবাস করেন। আধুনিক এই শহরে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ফুটবল লড়াই দেখার জন্য দর্শকের ভিড় বাড়ছে। কাজান জয় করতে ফ্রান্সের বিপক্ষে মেসিরা চ্যালেঞ্জ নিয়ে গতকাল দুপুরেই পৌঁছেছে। দেশকে কিছু দিতে হবে। ট্রফি ছাড়া অন্য কিছু ভাবছে না তারা।
৭৮ ও ৮৬ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা এবং ৯৮ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স ১৯৩০ ও ১৯৭৮ সালে দুই বার বিশ্বকাপ ফুটবলে মুখোমুখি হয়েছিল। দুইবারই আর্জেন্টিনার জয় হয়েছে। আর্জেন্টিনার কোচ সাম্পাওলি নাইজেরিয়ার বিপক্ষে পাওয়া জয়ের পর সেই পুরোন একাদশটাই ধরে রাখতে চান। তার হিসাবে কোচের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে ১৪টি ম্যাচ খেলেছে আর্জেন্টিনা। একাদশটাকে সেভাবেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলানো হয়েছে। ২৩ ফুটবলারের মধ্যে ১৯ জনকে খেলানো হয়ে গেছে। আর্জেন্টিনার সবেচেয়ে বড় দুর্ভাবনা হচ্ছে তাদের দলে হলুদ কার্ডের সংখ্যাটা। মেসি-মাচেরানোসহ ৬ জন হলুদ কার্ড দেখেছেন। আজকে ফ্রান্সের বিপক্ষে কেউ দ্বিতীয় হলুদ কার্ড পেলেই পরের খেলায় (পর্তুগাল অথবা উরুগুয়ের সঙ্গে) সে আর নামতে পারবে না।
ইত্তেফাক