ভোরের আভা ডেস্ক: গত সপ্তাহে আমার লেখা ব্লগে দেহের ওজন কমানোর ডায়েট আমি বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করেছি। আশা করি, তোমরা ওই ম্যাজিক ডায়েট ফলো করতে শুরু করে দিয়েছো। এবার বডিওয়েট কমানোর পদ্ধতিকে ত্বরান্বিত করার জন্য আমি কিছু নির্দিষ্ট ব্য়ায়ামের কথা বলব, যেগুলি কি না মাথা থেকে পা অবধি মেদ ঝরানোর সঙ্গে সঙ্গে মাসল টোনিং করতেও সাহায্য করে।
আমি তোমাদের পুরো ব্যায়ামের একটা ভিডিও দেখাচ্ছি। ভিডিওটা দেখে এই ব্যায়ামগুলো দু’ভাবে করবে।
ক) এই ভিডিওটির প্রথম ধাপে আমি যে ব্যায়ামগুলো করতে বলব সেই ব্য়ায়ামগুলোকে প্রত্যেকটিকে ধাপে ধাপে করতে হবে। এই পদ্ধতিতে পুরো ব্যায়ামটাকে ৩০ মিনিটের মধ্যে শেষ করতে হবে।
খ) এই ভিডিওটির দ্বিতীয় ধাপে মিউজিকের তালে তালে একসঙ্গে ননস্টপ ব্যায়ামগুলো সাত মিনিটের মধ্যে কমপ্লিট করবে। আবার ৩ মিনিট বিশ্রাম নিয়ে পুরো ব্যায়ামটা ৭ মিনিটে রিপিট করবে। এই পদ্ধতিটি মোট ৩ বার করবে। একে বলা হয় এইচআইআইটি। এর অর্থ হাই ইনটেনসিটি ইন্টারভাল ট্রেনিং। এই ট্রেনিং সিস্টেম একেবারে লেটেস্ট মেথড। এতে একদিকে যেমন তাড়াতাড়ি বডিওয়েট কমাতে সাহায্য করে, তেমনি অন্যদিকে স্ট্রেংথ, স্ট্যামিনা এবং স্মার্টনেস বাড়াতে সাহায্য করে।
প্রথম ধাপ অন্তত ১৫-২০ দিন ভাল ভাবে রপ্ত করার পরেই দ্বিতীয় ধাপ করার চেষ্টা করবে। প্রথম ধাপ খুব ভালমতো রপ্ত না করলে, তোমরা দ্বিতীয় ধাপ করতে পারবে না।
এবার আমি এই ১৪টি ব্য়ায়াম কীভাবে কতবার করতে হবে সেটা বিশদে লিখছি। কিন্তু প্রত্যেকটি ব্য়ায়ামের মাঝে অন্ততপক্ষে ৩০ সেকেন্ড করে বিশ্রাম নিতে হবে।
১) স্টেশনারী সাইক্লিং উইথ আর্মস অন ওয়েস্ট: দু’টি হাত কোমরে রেখে দুটো পা একটা একটা করে পেট অবধি তুলতে হবে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে। এই ব্যায়ামের ফলে পুরো শরীরটাই মোটামুটি ভাবে ওয়ার্ম আপ হয়ে যাচ্ছে।
২) স্পট রান: এক জায়গায় দাঁড়িয়ে দৌড়নো। প্রথম ১৫-২০ সেকেন্ড দৌড়নোর ভঙ্গিমা খুবই আস্তে আস্তে করতে হবে। তার পরে আস্তে আস্তে স্পিড বাড়াতে হবে। শেষ ১৫ সেকেন্ড যতটা সম্ভব পা তুলে খুবই স্পিডে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে দৌড়তে হবে। হাত-পা একসঙ্গে একই তালে নাড়াচাড়া করবে। এইভাবে দু’মিনিট করবে। এই ব্যায়ামের ফলে খুব ভাল ভাবে শরীরের ক্যালরি বার্ন হয়।
৩) শর্ট জাম্প অন টোজ: ভিডিওটিতে যেভাবে দেখানো হয়েছে, সেইভাবে হাত দুটো দু সাইডে রেখে আপার বডি লুজ এবং রিল্যাক্স রেখে, হাঁটু দুটো টাইট রেখে ফ্লোর থেকে হাফ ইঞ্চি জাম্প করতে হবে। যাতে করে শরীরের উপরিভাগের সমস্ত মাংসপেশি নড়াচড়া করে। এই রকম ৩০ বার করতে হবে। এই ব্যায়ামের ফলে দেহের উপরিভাগে খুব ভাল ভাইব্রেশন হয় এবং মেদ কমাতে সাহায্য করে।
৪) জাম্পিং জ্যাক: ভিডিওর ভঙ্গিমায়, মিউজিকের তালে তালে এই মুভমেন্টটা ৩০ বার করতে হবে। কোনও ভাবেই হাত-পা স্টিফ করবে না। এই ব্যায়ামের ফলে ক্যালোরি বার্নের সঙ্গে সঙ্গে পা এবং কাঁধের মেদ কমাতে এবং টোনিং করতে সাহায্য করে।
৫) রিদম আর্ম স্ট্রেচ: ভিডিওর ভঙ্গিমায় হাত-পা স্টিফ না করে সম্ভব হলে মিউজিকের তালে তালে ৩০ বার প্র্যাকটিস করতে হবে। জাম্পিং জ্যাক-এর মতোই এরও একই গুণ। এটি ওর থেকে কিছুটা কঠিন।
৬) ফ্লোর টুইস্ট: এটি একটি ডান্স ফর্মের ব্যায়াম। এতে কোমরের মেদ কমতে ভীষণ ভাবে সাহায্য করে। এটি একসঙ্গে ৩০ সেকেন্ড করতে হবে।
৭) ওয়াল টুইস্ট: ভিডিওটির ভঙ্গিমায় করতে হবে। এই ব্যায়াম কোমরের মেদ কমানোর সঙ্গে সঙ্গে কোমর ফ্লেক্সিবল হতে সাহায্য করে। এইভাবে ২০ বার করতে হবে।
৮) সাইড বেন্ড থাই আপার: কোমরের দুদিকের থলথলে ভাব দূর হয় আর কোমরের মাসল টোনিং হয়। এটি ২০ বার করতে হবে।
৯) বাইসাইকেল টুইস্ট: ভিডিওটির ভঙ্গিমায় এই ব্যায়াম আস্তে আস্তে করতে হবে। যখন তুমি কনুই দিয়ে হাঁটু টাচ করছ, তখন শ্বাস ছাড়বে। আবার যখন হাত নামাবে তখন শ্বাস নেবে। এইভাবে ২০ বার করবে। এই ব্যায়াম কোমরের মেদ কমানোর সঙ্গে সঙ্গে পেটের উপরের ভাগের মেদ কমাতেও সাহায্য় করে। খেয়াল রাখবে যখন হাত হাঁটুতে ঠেকাচ্ছ তখন যেন কোমর আর পেটে চাপ সৃষ্টি হয়।
১০) ফ্লোর সিট আপ: ভিডিওর ভঙ্গিমায় প্রথম প্রথম দুটো হাত ফ্লোরে সাপোর্ট দিয়ে শ্বাস ছেড়ে উঠবে এবং শোওয়ার সময়ে শ্বাস নেবে। দেখবে যখন শ্বাস ছেড়ে উঠছ তখন পেটে যেন চাপ পড়ে। কিছুদিন অভ্যাস করার পরে ভিডিওর ভঙ্গিমায় হাত দুটো মাথার পিছনে রাখবে। উপরের এবং মাঝের পেটের মেদ কমানোর এটি একটি ধন্বন্তরী ব্যায়াম। এটি ২০ বার করবে।
১১) লেগ ক্রাঞ্চ ১-২: ভিডিওর ভঙ্গিমায় দুটো পা সোজা রেখে এবং মাথা অর্থাৎ আপার এবং লোয়ার বডি একসঙ্গে উঠবে ও নামবে। ওঠার সময় শ্বাস ছেড়ে পেটের চাপ সৃষ্টি করবে। নামার সময় আস্তে আস্তে করে শ্বাস নেবে। এইভাবে ১০ বার করতে হবে। এটি লেগ ক্রাঞ্চ ১-এর মতোই ১০ বার করতে হবে। শুধু দুটো পা তোলার সময় ভাঁজ করে তুলতে হবে। এই ব্যায়ামের ফলে পেটের মাঝখান এবং তলপেটের মেদ কমাতে খুবই সাহায্য করে।
১২) লেগ রেস: ভিডিওর ভঙ্গিমায় দুটো পা ফ্লোর থেকে ৪৫-৬০ ডিগ্রি উপরে তুলতে হবে। এবং খেয়াল করবে যাতে তলপেটে যথেষ্ট চাপ অনুভব করতে পারো। এইভাবে ২০ বার করতে হবে। তলপেটের মেদ কমানো এবং টোনিং করার এটা একটা অব্যর্থ ব্যায়াম।
১৩) রিভার্স ফ্লাইং: ভিডিওর ভঙ্গিমায় কোমরে এবং কাঁধের জোরে শ্বাস নিয়ে শরীরটা পিছনের দিকে অল্প আর্চ করার চেষ্টা করতে হবে। আবার শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে স্বস্থানে ফিরতে হবে। এই ব্যায়াম কোমরের আড়ষ্টতা দূর করে। শিরদাঁড়া সাবলীল করে, বুক এবং কাঁধের মাসল টোনিং করতে সাহায্য করে। এই ব্যায়ামটি প্রথমে ১০ বার করে ৩০ সেকেন্ড রেস্ট নিয়ে আবার ১০ বার করতে হবে।
১৪) ব্য়াক পুশআপ: ভিডিওর ভঙ্গিমায় যখন হাত ফোল্ড করে নীচের দিকে নামছে তখন শ্বাস নেবে। ওঠার সময়ে শ্বাস ছাড়বে। পুরো উঠে গেলে ২ সেকেন্ড হাত দুটো টাইট করে রাখবে। আবার রিপিট করবে। এই রকম ১৫ বার করে দু’বার করবে। মাঝে ৩০ সেকেন্ড বিশ্রাম নেবে। এই ব্যায়ামের ফলে থলথলে হাত টোনিং এবং শেপিং করতে ভীষণ ভাবে সাহায্য করে।
আমি তোমাদের প্রত্যেকটা ব্যায়াম যে ক’বার করতে বলেছি, প্রথম প্রথম কিন্তু তোমরা পারবে না, আস্তে আস্তে সইয়ে সইয়ে রিপিটেশন বাড়াতে হবে। এবার আমি এইচআইআইটি-র ব্যাপারে তোমাদের গাইডলাইন দেব। প্রথম ধাপের ব্যায়ামগুলো যখন ভাল ভাবে রপ্ত হয়ে যাবে, তার পরেই দ্বিতীয় ধাপের ব্যায়ামগুলি শুরু করা উচিত। পুরো ভিডিওটা ২ মিনিট ২০ সেকেন্ড সময় লেগেছে। দ্বিতীয় ধাপে পুরো ভিডিওতে দেওয়া এক্সারসাইজগুলো একসঙ্গে ননস্টপ ৭ মিনিট করবে। তার পরে ৩ মিনিট বিশ্রাম নিয়ে আবার ৭ মিনিট রিপিট করবে। এইভাবে মোট ৩ বার করতে হবে। এর অর্থ যেহেতু ভিডিওটার ডিউরেশন ২ মিনিট ২০ সেকেন্ড, সেই জন্য ভিডিওতে দেখানো প্রত্যেকটি ব্যায়াম তার ৩ গুণ রিপিটেশন করলে মোটামুটি ভাবে ৭ মিনিট সময় হয়ে যাবে। প্রথম প্রথম দু’বার রিপিট করবে। তার পরে ভাল ভাবে রপ্ত হওয়ার পরে ৩ বার করে রিপিট করবে।
যাদের ঘাড়ে ও কোমরে ব্যথা রয়েছে, তারা কিন্তু মাটিতে শুয়ে পেটের ব্যায়ামগুলো করবে না। তাদের পেটের মেদ কমানোর জন্য কী কী ব্যায়াম করা উচিত, সেটা আমি পরে আলোচনা করব। সবকিছু ভাল ভাবে রপ্ত হয়ে যাওয়ার পরে প্রথম দিন প্রথম ধাপের ব্যায়াম এবং দ্বিতীয় দিন অল্টারনেটলি দ্বিতীয় ধাপের ব্যায়ামগুলো করবে। এর সঙ্গে যদি সকালে বা বিকেলে ব্রিস্ক ওয়াক করা যায় তাহলে তো আর কথাই নেই।
আমার এই ডায়েট টিপস এবং কিছু ফ্রি-হ্যান্ড ব্যায়ামের গাইডলাইন বোর্ড পরীক্ষার্থী এবং অল্পবয়সী পুরুষ-মহিলার জন্য উৎসর্গ করলাম। তোমরা ভাল থাকলে আমি খুব আনন্দিত হব। কারণ—
‘‘মোটিভেশন ইজ মাই প্যাশন’’!!
গুরুপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়
তোমাদের যদি কোনও জিজ্ঞাস্য থাকে তাহলে তোমরা আমাকে নির্দ্বিধায় আমার ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্য়াপে (৯৮৩৬০৮৮৯৯৮) যোগাযোগ করতে পারো। সবাই ভাল থেকো। বেস্ট অফ লাক!