ভোরের আভা ডেস্ক: আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বড় আকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। যেখানে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলের মতো মেগা প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ সময়মতো শেষ করতে যথাযথ নজরদারি ও মূল্যায়ন বাড়ানো জরুরি।
চলতি অর্থবছরে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে এক লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা খরচের পরিকল্পনা ছিল সরকারের। অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে খরচ হয়েছে এডিপিতে বরাদ্দের ৫২ দশমিক ৪২ শতাংশ, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ শতাংশ কম।
এ অবস্থায় আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এক লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার, যার এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার জোগান দেবে সরকার, বৈদেশিক সহায়তা ধরা হয়েছে ৬০ হাজার কোটি টাকা।
এ ব্যাপারে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, ‘যে হারে বিনিয়োগ বাড়ছে, সরকারি সে হারে দক্ষতা বাড়িয়ে তোলা তো কঠিন। বাজেট বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জনবল তো সেই হারে বাড়ে না। বাজেট বাস্তবায়নের হার মোটামুটি ৯০ শতাংশ থাকছে প্রতিবছর। এর অর্থ হলো, বাজেট বাড়ানো সত্ত্বেও বাস্তবায়নের হার যেহেতু কমছে না, বাস্তবায়নের হারও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে—এটা বলতেই হবে।’
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘এই প্রকল্পগুলো খুবই উচ্চমূল্যের প্রকল্প। মূল্যটা বেশি হলে যেটা হয় ইকোনমিক কস্ট বা ফাইন্যান্সিংটা বেড়ে যায়। ফলে পরবর্তী সময়ে আমাদের ঋণের বোঝা হিসেবে চেপে আসে জাতির ঘাড়ে। এবং সেটা একটা সমস্যা হয়ে যেতে পারে।’
আসছে এডিপিতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও পদ্মা সেতু মিলিয়ে সর্বোচ্চ টাকা বরাদ্দ থাকবে পরিবহন খাতে। আর বিশেষ গুরুত্ব থাকছে পদ্মা সেতু রেলসংযোগ এবং মেট্রোরেল প্রকল্পে।
বিদ্যুৎ খাতেও গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখা হচ্ছে মাতারবাড়ী ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য। অর্থ বরাদ্দের দিক থেকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন খাতের বড় প্রকল্পগুলোকে।
অর্থনীতিবিদ ড. শামসুল আলম আরো বলেন, ‘কাজ তো ভালোভাবে এগিয়ে চলেছে বলে আমি মনে করি। সব মেগা প্রজেক্ট। যেগুলো আমাদের অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো টাকার অঙ্কে বৃহৎ, প্রযুক্তিগত দিক থেকেও জটিল। প্রকিউরমেন্টের দিক থেকেও অনেক বেশি আমদানিনির্ভর। এ কারণেই এগুলো ছিল আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এখন সেগুলো কাটিয়ে ওঠা গেছে। এবং কাজকর্ম এখন দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে।’
এ ব্যাপারে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, ‘যে মেগা প্রজেক্টগুলো বাস্তবায়ন করছে, তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং রিয়ার্ডেড পানিশমেন্টের আন্ডারে আনা। সরকারের ইনটেনশানটা খুবই ভালো যে, মেগা প্রজেক্টগুলোর বাস্তবায়ন দরকার। কিন্তু ইনটেনশনটাকে বাস্তবে প্রয়োগ করার জন্য যে ধরনের ইনস্টুমেন্ট দরকার, মন্ত্রণালয়গুলোকে অ্যাকটিভ করে এবং তাদের দক্ষতার মাধ্যমে সেই জায়গায় আমার মনে হয় আমরা এখনও অনেক পিছিয়ে আছি।’
এ ছাড়া আগামী অর্থবছরে উন্নয়ন প্রকল্পের গুণগত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এনটিভি