বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার খেলোয়াড়েরাই বেশি উজ্জ্বল
ক্লাব ফুটবলে এখন ছুটি। কিন্তু খেলোয়াড়দের ছুটি নেই। দেশের হয়ে লড়তে হচ্ছে বিশ্বকাপে। ফুটবলের সবচেয়ে বড় এই টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার খেলোয়াড়েরাই বেশি উজ্জ্বল। আসুন দেখে নেই জাতীয় দলের জার্সিতে এ দুটি ক্লাবের খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স—
রিয়াল মাদ্রিদ
স্পেন জাতীয় দলে ৬জন খেলোয়াড় সুযোগ পেয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদ থেকে। ডিফেন্সে সার্জিও রামোস, দানি কারবাহল মাঝমাঠে সঙ্গে ইসকো ছাড়াও মার্কো এসেনসিওকে নিয়মিতই একাদশে খেলাচ্ছেন কোচ ফার্নান্দো হিয়েরো। স্পেনের দ্বিতীয় ম্যাচে ইসকো দেখা পেয়েছেন গোলের।
পঞ্চম মাদ্রিদিস্তা যিনি বিশ্বকাপে গোলের দেখা পেয়েছেন। ছবি:রয়টার্সরিয়াল মাদ্রিদের সবচেয়ে বড় তারকা অবশ্য পর্তুগালের। স্পেনের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে রোনালদো বুঝিয়ে দিয়েছেন শুধু চ্যাম্পিয়নস লিগে নয়, বিশ্বকাপেও তিনি প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দিতে প্রস্তুত। শুধু কী তাই? এই রোনালদোর পায়েই ভর করে পর্তুগাল উঠে গেছে শেষ ষোলোয়।রিয়াল মাদ্রিদের মাঝমাঠের মূল ভরসা লুকা মডরিচ। তিনি আবার ক্রোয়েশিয়ারও আশা ভরসার প্রতীক। আর্জেন্টিনাকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দেওয়ার ম্যাচে মনে রাখার মতো একটি গোল করেছিলেন মডরিচ। ম্যাচে খেলেছিলেনও দারুণ। তাঁর দল ক্রোয়েশিয়াও ৯ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে উঠে গেছে শেষ ষোলোয়।
১৬ তে ইউরো জিতেছেন, রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলছেন দুর্দান্ত। রিয়ালের রোনালদোকেই পেয়েছে পর্তুগাল। ছবি:রয়টার্সকোস্টারিকা বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিলেও গতবারের মতো এবারও গোলকিপার কেইলর নাভাস। হ্যাঁ, রিয়াল মাদ্রিদ গোল পোস্টের ভরসা এই নাভাসই। ইসকো এখন পর্যন্ত ২৬১টি সফল পাস দিয়েছেন। টনি ক্রুস, মার্সেলো, রামোসরাও খুব একটা নেই পিছিয়ে। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত তাঁদের ঠিক পাসসংখ্যা যথাক্রমে, ২৪২, ২৪০ ও ২৩১। মার্সেলো সফলভাবে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের কাছ থকে বল ছিনিয়ে নিয়েছেন ২৬ বার।নেইমারকে ছাড়িয়ে দলের মূল ভূমিকায় এখন কুতিনহো। ছবি:রয়টার্সবার্সেলোনা
বার্সেলোনার মোট ১৪ জন খেলোয়াড় বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিত্ব করছেন। ফিলিপে কুতিনহো গ্রুপপর্বে ব্রাজিলের প্রতিটি ম্যাচেই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। প্রথম ম্যাচে তাঁর গোলেই ১ পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ে ব্রাজিল। দ্বিতীয় ম্যাচে কোস্টারিকার বিপক্ষে ৯০ মিনিট পর্যন্ত কোনো গোল পায়নি ‘সেলেসাও’রা। ড্র করে মাঠ ছাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল যখন-তখন ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হলেন কুতিনহো। যোগ করা সময়ের এক মিনিটে করা তাঁর গোলে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে ব্রাজিল। তৃতীয় ম্যাচে পাওলিনহোর গোলেও রয়েছে তাঁর ‘অ্যাসিস্ট’। এবার অবশ্য বার্সার দুই খেলোয়াড়ের প্রযোজনায় ব্রাজিল গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া নিশ্চিত করেছে।
স্পেনের হয়ে খেলছেন বার্সার ৪ খেলোয়াড়। এই চারজনই খেলছেন মূল একাদশে। ইনিয়েস্তা-বুসকেটসরা গোল করাতে রাখছেন অবদান। গ্রুপ ‘ডি’তে নিজেদের শক্তি দেখিয়েছে ক্রোয়েশিয়া। আর তাতে বার্সার ইভান রাকিটিচ অবদান রাখবেন না, তা কি হয়! আর্জেন্টিনাকে ৩-০ গোলে হারানোর দিনে একটি গোল করেছেন নিজে। রিয়াল-বার্সার মদ্রিচ-রাকিটিচ জুটি তো জাতীয় দলের হয়ে প্রতিপক্ষদের উড়িয়ে দিচ্ছেন। আর্জেন্টিনার হয়ে তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন বার্সালোনার সবচেয়ে বড় তারকা লিওনেল মেসি।ক্রোয়েশিয়া খেলছে দুর্দান্ত, রাকিটিচও তাই। ছবি:রয়টার্সপ্রথম দুই ম্যাচে না জ্বলে উঠলেও, নাইজেরিয়ার জালে মেসি গোল করেছেন, দলও উঠেছে নকআউট পর্বে। পোল্যান্ডের সঙ্গে ৩-০ গোলে জয়ের ম্যাচে কলম্বিয়ার হয়ে লক্ষ্যভেদ করেছেন বার্সার ইয়েরি মিনা। সেনেগালের বিপক্ষেও গোল করেছেন তিনি। ফ্রান্সের মূল দলে খেলছেন বার্সার উমতিতি ও ওউসমানে ডেমবেলে। বার্সালোনার চমক হলো, ৯ টি দেশের হয়ে তাঁদের খেলোয়াড়েরা বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছেন। যেটি কিনা একটি ক্লাব থেকে এবারের বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ।
গত এক যুগ ধরে ইউরোপে নিজেদের আধিপত্য দেখিয়েছে স্প্যানিশ ফুটবল। আর এর মূল কৃতিত্ব স্পেনের দুই ক্লাব বার্সেলোনা আর রিয়াল মাদ্রিদের। নিজেদের তারা ইউরোপ সেরা প্রমাণ করেছে অনেক আগেই। আর তাদের ক্লাবের খেলোয়াড়রা কেমন করে বিশ্বকাপে, ফুটবল ভক্তদের এই নিয়ে বেশ আগ্রহ। নিশ্চয়ই ক্লাবের মুগ্ধতা ধরে রাখবেন জাতীয় দলের হয়েও। স্পেনের ২৩ জনের ১০ জনই এই দুই ক্লাবের।
প্রথম আলো