আভা ডেস্ক: বিশ্বকাপ মানে কোটি কোটি মানুষের উৎসব। খেলোয়াড়, দল সহকারী, সাংবাদিক, আয়োজক ছাড়াও একেকটি খেলায় ৫০ হাজারের মত দর্শক থাকে স্টেডিয়ামে। এমন মহাযজ্ঞে খেলার টিকেটের পর খাবার, হোটেল কক্ষ ছাড়া সবচেয়ে চাহিদা থাকে যৌনকর্মীদের। সেটি প্রায় অলিখিতভাবেই স্বীকৃতি বলা চলে।
এবারের রাশিয়া বিশ্বকাপ ফুটবলও বলতে গেলে কপাল খুলে দিয়েছে যৌনকর্মীদের। বিশাল রাশিয়ার নানা প্রান্তের যৌনকর্মীরা তো আছেই বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষ্যে বিভিন্ন দেশ থেকেও নানাভাবে জড়ো করা হয়েছে যৌনকর্মীরা। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্যান্য দেশ, পশ্চিম আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চল থেকে লাখও যৌনকর্মী পাচার করে আনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ইউরোপের দেশসমূহের মধ্যে অভ্যন্তরীণ যাতায়াত সুবিধা হওয়ায় যৌনকর্মীদের চলাচলেরও সুবিধা হয়েছে। স্বাভাবিক ভিসাতেই রাশিয়ায় ঢুকতে পারছে যৌনকর্মীরা। বিশ্বকাপ আসরের কারণে শিথিল করা হয়েছে ভিসা নিয়ে কড়াকড়িও।
যাতায়াতের এমন সুযোগকে কাজে লাগাতে অধিক মুনাফার আশায় যৌনকর্মীদের খেলার শহরগুলোতে জড়ো করছে যৌনব্যবসায়ী বা দালালরা। অনেককে পাচার করেও আনা হয়েছে বলে জানাচ্ছে রাশিয়ার সংবাদ মাধ্যম। বিষয়টিকে দাসত্ব হিসেবেই দেখছে মানবাধিকার কর্মীরা।
মস্কোভিত্তিক দাসত্ব বিরোধী সংগঠন অল্টারনেটিভা’র ইউলিয়া সিলুয়ানোভার মতে বিশ্বকাপ আসর হচ্ছে যৌনব্যবসার জন্য বড় ধরণের সুযোগ। তিনি বলেন, বিদেশ থেকে প্রতি বছর কয়েক হাজার নারী পাচার হয় রাশিয়ায়। গত গ্রীষ্মে ফিফা কনফেডারেশন কাপের সময় ভিসা শিথিল করায় তখন থেকে পাচারের আকার বৃদ্ধি পায় বলে তিনি মনে করেন।
মানবাধিকার সংগঠন সিলভার রোজের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, রাশিয়াজুড়ে প্রায় ৩০ লাখ নিয়মিত যৌনকর্মী রয়েছেন। এরপরেও বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে বিদেশ থেকে যৌনকর্মীদের এ দেশে পাচার করে আনা হয়েছে।
এরজন্য ইউলিয়া অবশ্য ভিসা সুবিধা সহজ করে দেয়ার সমালোচনা করেছেন। কারণ যার কাছে অন্তত একটা খেলার টিকেট থাকবে তাকেও ভিসা দিয়ে দিচ্ছে রাশিয়া।
রাশিয়ার ১১টি শহরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্বকাপের লড়াই। স্থানীয় একটি পত্রিকার এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মস্কো ও সেন্ট পিটার্সবার্গের মাঝামাঝি লেনিনগ্রাদস্কোয়ে হাইওয়ে এলাকা এখন যৌনকর্মীদের স্বর্গরাজ্য বলা চলে। যৌনকর্মীরা বাহারী পোষাক ও সাজসজ্জা নিয়ে পথচারী ও গাড়ি আরোহীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। প্রায়ই অনাবৃত হয়ে খদ্দেরের আশায় নানাভাবে শারীরিক অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শণ করছে।
মে মাসে পুলিশ যৌনকর্মীদের ভিড় করা এসব এলাকায় অভিযান চালালেও বিশ্বকাপের কারণে এখানে যৌনকর্মীদের সমাগম রুখতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এরপরেও দেশের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে ছোটখাটো অভিযান অব্যাহত আছে। এরপরেও কোটি কোটি মানুষের সমাগমে থেমে নেই যৌনবাণিজ্য।
সন্ধ্যা হলেই যৌনকর্মীরা শহরের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে যাচ্ছে। খদ্দেরের আশায় রীতিমত রাস্তাতেই হাঁকডাক দিচ্ছে তারা। আবার পাচারকারীরা ছোট ছোট ফ্ল্যাট ভাড়া করে এদের রাখে। ফোনে বা অনলাইনে চাহিদা মত খদ্দেরদের কাছে পাঠাচ্ছে তাদের।
ইউলিয়া জানাচ্ছেন, এদের বেশিরভাগ থেকেই রাশিয়ায় প্রবেশের পরে পাসপোর্ট কেড়ে নেয়া হয়। তা ফেরত পেতে পাচারকারীদের ৫০ হাজার ডলার পর্যন্ত পরিশোধ করতে হয় তাদের। নয়ত শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয় বা দেশে তাদের পরিবারের সদস্যদের ক্ষতি করা হবে বলে হুমকি দেয়া হয়।
তবে অধিকার সংগঠনগুলো সমালোচনা করলেও এসবের দিকে গুরুত্ব নেই কর্তৃপক্ষের। কোটি কোটি মানুষের এমন উৎসবে যৌন চাহিদা মেটানোর উপায় হিসেবেও যৌনকর্মীদের সমাগমকে স্বাভাবিক হিসেবেই দেখছেন তারা। তবে এক্ষেত্রে অনাকাঙ্ক্ষিত কোন ঘটনা যাতে না ঘটে সেদিক দিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থার দিকে জোর দিচ্ছেন তারা।