বাংলাদেশ রেল প্লাস মাইনাসে সমান মাইনাস প্লাস।

আভা ডেস্ক: বাংলাদেশ রেলওয়ের উন্নয়নে ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৭৫টি নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। বিপুল এ বিনিয়োগের পরও লোকসানের বৃত্ত থেকে বেরোতে পারছে না সংস্থাটি। উল্টো লোকসানের পাল্লা ক্রমে ভারী হচ্ছে। পরিচালন ব্যয়ের বিপরীতে আয়ের হিসাবে গত পাঁচ বছরে রেলের লোকসান হয়েছে ৫ হাজার ৭২১ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন ও বগি রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় বেড়ে যাওয়া, পণ্য পরিবহনে গুরুত্ব না দেয়া, অদক্ষতা, অপচয়, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনাই রেলের লোকসানের মূল কারণ।

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রেলের যাত্রীসেবার মানোন্নয়ন ও সুুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৮৪ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭৫টি নতুন প্রকল্প ও ৯০ হাজার ৯১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৩টি সংশোধিত প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। এর মধ্যে কাজ শেষ হয়েছে ৫১টির। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) ৪৫টি বিনিয়োগ প্রকল্প ও তিনটি কারিগরি সহায়তা প্রকল্প চলমান রয়েছে। এ অর্থবছর আরএডিপিতে থোকসহ ১০ হাজার ৮১৬ কোটি ৯৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

তবে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ হলেও ধারাবাহিক লোকসানেই আছে রেলওয়ে। লোকসান থেকে বেরোনোর জন্য ২০১২ সালে গন্তব্যভেদে ৫ থেকে ১১০ শতাংশ ও ২০১৬ সালে ৫ থেকে ৯ শতাংশ ভাড়া বাড়ায় সংস্থাটি। কিন্তু দুই দফা ভাড়া বাড়িয়েও লোকসানের বৃত্ত থেকে বের হতে পারেনি। রেলের আয়-ব্যয় বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০১২ সালে প্রথম দফায় ভাড়া বাড়ানোর পরের চার অর্থবছর লোকসান হয়েছে ৩ হাজার ৭৫৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। যদিও তার আগের চার অর্থবছরে লোকসান ছিল ২ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ ভাড়া বাড়ানোর পরও লোকসান ৪৫ শতাংশ বেশি হয়েছে।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৮-এর তথ্য বলছে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১ হাজার ৫৬২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ের বিপরীতে রেলওয়ের আয় হয় ৮০৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা। সে বছর লোকসান ছিল ৮৭২ কোটি ৫ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১ হাজার ৬০১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ব্যয়ের বিপরীতে আয় হয় ৮০০ কোটি ১৭ লাখ টাকা। ওই অর্থবছর প্রতিষ্ঠানটির লোকসান ছিল ৮০১ কোটি ৫ লাখ ৫২ হাজার টাকা। আর ২০১৪-১৫ অর্থবছর ১ হাজার ৮০৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ের বিপরীতে আয় হয় ৯৩৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এ সময়ে লোকসানের পরিমাণ ছিল ৮৭২ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২ হাজার ২২৯ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ের বিপরীতে আয় হয় ৯০৪ কোটি ২ লাখ টাকা। লোকসান ছিল ১ হাজার ৩২৫ কোটি ২০ লাখ টাকা। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা আয়ের বিপরীতে ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ১৪২ কোটি টাকা। অর্থাৎ সর্বশেষ অর্থবছরে লোকসানের পরিমাণ ১ হাজার ৮৫২ কোটি টাকার বেশি।

লোকসানের বিষয়ে জানতে চাইলে রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, বিএনপি সরকারের আমলে রেল ছিল ভীষণভাবে অবহেলিত। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর রেলের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় করেছে। রেলপথ, ইঞ্জিন, কোচ বাড়ানো হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে। রেলের উন্নয়নের জন্য বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প চলমান। এগুলো বাস্তবায়ন হলে রেল লোকসানের ধারা থেকে অবশ্যই বেরিয়ে আসবে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৬৮ শতাংশ রাজস্ব আয় হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ৮০ লাখ ১৩ হাজার যাত্রী পরিবহনের লক্ষ্য ছিল। পরিবহন হয়েছে ৭০ লাখ ২৯ হাজার। যাত্রী পরিবহন বাবদ আয়ের লক্ষ্য ছিল ৮১ কোটি ১১ লাখ টাকা। আয় হয়েছে ৭৮ কোটি ৬ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৬১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা আয়ের লক্ষ্যের বিপরীতে রাজস্ব আয় হয়েছে ৬৮ শতাংশ বা প্রায় ১১০ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, এ হিসাবটি ফেব্রুয়ারি মাসের। সাম্প্রতিক হিসাবে আমাদের রাজস্ব আয় লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি চলে এসেছে।

এদিকে ক্রমাগত লোকসানে থাকা রেলের উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় রেলওয়ের সর্বশেষ অনুমোদিত মহাপরিকল্পনায় আগামী ৩০ বছরে ২৩০টি প্রকল্পে সাড়ে ৫ লাখ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে হালনাগাদকৃত মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০৪৫ সালের জুন পর্যন্ত ছয়টি পর্যায়ে বাস্তবায়নের জন্য ৫ লাখ ৫৩ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৩০টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর আগে ২০১৩ সালে অনুমোদিত আগের মহাপরিকল্পনায় ২০১০ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত ২০ বছর মেয়াদে মোট ২ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪৪ কোটি ২১ লাখ টাকার ২৩৫টি প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল।

Next Post

বড় বাপের বড় ছেলে বলে কথা, তাই একটু গড়িমসি পুলিশের।

বৃহস্পতি জুন ২১ , ২০১৮
আভা ডেস্ক: ঢাকার মহাখালীর ফ্লাইওভারে গাড়িচাপায় পথচারী সেলিম ব্যাপারী নিহত হওয়ার ঘটনার পর ৩৬ ঘণ্টা পার হলেও অভিযুক্ত শাবাব চৌধুরীকে গ্রেফতার ও ঘাতক গাড়িটি জব্দে কোনো অগ্রগতি নেই পুলিশের। শাবাব নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করীম চৌধুরী ও কবিরহাট উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুন নাহার শিউলির একমাত্র ছেলে। তিনি রাজধানীতেই অবস্থান করছেন […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links