বদলী করায় কারারক্ষীর রোষানলে উর্ধতন কর্মকর্তারা, হয়রানিসহ মিথ্যাচারের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিনিধি: গোপন তথ্যের ভিত্তিতে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার, ডেপুটি জেলার হানিফ, সার্জেন্ট ইন্সট্রাক্টর আবদুল বাড়ী ও সার্জেন্ট ইন্সট্রাক্টর কবির ও আরো কয়জন কারারক্ষী ও সিভিল কর্মচারীর সমন্বয়ে কারাভ্যন্তরে প্রবেশের প্রাক্কালে আকস্মিক তল্লাশির মাধ্যমে মনিরুল ইসলাম নামে এক কারারক্ষীর পরিহিত ডিএমএস বুটের মোজার নীচ থেকে ৬ প্রকার অবৈধ দ্রব্যাদি উদ্ধারসহ জব্দ করা হয়। ডিউটি টিম রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের ওই কারারক্ষীর ডিএমএস বুট থেকে ৬ ধরনের অবৈধ দ্রব্য উদ্ধার করেন। রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার এর দায়িত্বে থাকা বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো: ইমাম উদ্দিন’কে বিষয়টি অবহিত করে পরেরদিন রিপোর্ট লিখে অভিযুক্ত কারারক্ষী’কে হাজির করলে বিজ্ঞ অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ কারারক্ষীর নিকট বক্তব্য আকারে শোনেন। এসময় অভিযুক্ত কারারক্ষী দোষ স্বীকার করে নি:শর্ত ক্ষমা চান এবং ভবিষ্যতে এরকম কাজ করবে না মর্মে প্রতিশ্রুতি দেয়। অভিযোগটি অবৈধ দ্রব্য সংক্রান্ত, এটা ক্ষমার অযোগ্য হওয়ায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু হয়। পরবর্তীতে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষ কারারক্ষী’ মনিরুল ইসলামকে অন্য কারাগারে তাৎক্ষণিক বদলি করেন। বর্তমানে অভিযুক্ত কারারক্ষী চাঁপাইনবাবগঞ্জ কারাগারে আছেন।
বদলীতে ক্ষিপ্ত হয়ে ডিআইজি প্রিজন্স, জেল সুপার, জেলারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারসহ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন তথ্য সরবরাহপূর্বক নানা হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হন ওই কারারক্ষী।
গত ১৪ জুন কারারক্ষী টিনসেড ব্যারাকে কারারক্ষীর ট্রাঙ্ক তল্লাশি করে অবৈধ দ্রব্যাদি পাওয়া যায়নি। ডিএমএস বুট থেকে উদ্ধারকৃত অবৈধ মালামাল উদ্ধারের প্রেক্ষিতে তাঁকে শাস্তিস্বরূপ চাঁপাইনবাবগণ্জ জেলা কারাগারে Stsnd Release(তাৎক্ষণিক) বদলী করা হয়।
মনিরুল ইসলাম নামে ওই কারারক্ষীর মিথ্যাচার, হয়রানি ও মানহানিকর ও ভিত্তিহীন লিখিত ও ভিডিও বক্তব্যের রোষানলে পড়েন রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সাবেক সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল জলিল ও সাবেক জেলার মো: নিজাম উদ্দিন এবং রাজশাহী বিভাগ এর ডিআইজি প্রিজন মো: কামাল হোসেন। প্রতিবেদকের অনুসন্ধানী তদন্তে ও সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে কারারক্ষী মনিরুল অভিযোগের সত্যতা মেলেনি। অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত কারারক্ষী’কে প্রশ্ন করা হলে কোন প্রমাণক বা সদুত্তর দিতে পারেননি মনিরুল ইসলাম। বরং ডিআইজি প্রিজন্স কামাল হোসেন এর যোগদানের পর হতে অদ্যাবধি নিবিড় তদারকির কারণে রাজশাহী বিভাগস্থ ৮ টি কারাগারের বন্দীদের খাবারের মান উন্নত হয়েছে এবং সাধারণ বন্দীদের মতে কারাগারে এখন শুধু ডাল দিয়েই ভাত খাওয়া যায়। এছাড়াও, কারা ক্যান্টিন এর শুকনা আইটেমসমূহ গায়ের দামে এবং ফলমুলসহ ভেজা আইটেমসমূহ ক্যান্টিন নীতিমালা অনুযায়ী ন্যায্যমূল্যে বন্দীদের নিকট বিক্রি করা হয়।
কারারক্ষী মনিরুল ইসলামের অভিযোগের বরাতে জানা যায়, ডিআইজি প্রিজন্স ও সিনিয়র জেল সুপার(সাবেক) কারারক্ষী দিয়ে কারাগারের ভিতরে খামার তৈরি করে গরু, ভেড়ার মত গাড়ল এবং হাঁস পালন করছেন। গরু পালনে ঘাস চাষ এবং গরু পালনের কারণে ডেঙ্গুর উপদ্রব, বদলী বাণিজ্য, জেলকোডের নিয়ম ভেঙ্গে কারারক্ষীদের তল্লাশি, ফাঁসির আসামীদের সিগারেট না দেওয়া, অর্থের বিনিময়ে বন্দীদের বিভিন্ন অবৈধ সুবিধা প্রদান, বন্দীদের ছোট ছোট ফ্যান ক্লোজ করে অসহায় বন্দীদেরকে পাকিস্তানী বড় ফ্যান আনতে বাধ্য করা, সুপার ও জেলার(সাবেক) এর নামে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এর মাননীয় মেয়র কর্তৃক প্রতিটি সেলে একটি করে পাকিস্তানী বড় ফ্যান দিবেন বলে অপপ্রচার চালানো, কারাগারে আটক বিএনপি নেতা আবু সাঈদ চাঁদকে অবৈধ সুযোগ-সুবিধা এবং মাদক মামলায় আটক মাদক সম্রাটদের বিভিন্ন অবৈধ সুবিধা প্রদানসহ ভিত্তিহীন নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন। এছাড়াও পুকুরে মাছ চাষ করা, জমিতে চাষ করা সবজি, কারাভ্যন্তর ও বাহিরের ক্যান্টিনে বিক্রি করা পণ্যের লভ্যাংশ হাতিয়ে নেওয়াসহ কারা হাসপাতালে অসুস্থ বন্দীর পরিবর্তে টাকার বিনিময়ে প্রভাবশালী সুস্থ বন্দীদের ভর্তি রেখে হাসপাতাল বানিজ্য, বন্দিদের প্রাপ্যতা অনুযায়ী খাবার সরবরাহ না করা, বন্দীদের স্বজনদের কাছে সুবিধা নিয়ে ননডিউ সাক্ষাতের ব্যবস্থা করার অভিযোগ তুলেন তিনি।
প্রমাণ ছাড়াই সুস্পষ্ট অভিযোগ না তুলে শুধুমাত্র হয়রানী এবং প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যাক্তি ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে অসত্য তথ্য উপস্থাপন করেন ওই কারারক্ষী বলে মনে করছেন কারা কতৃপক্ষ। অভিযোগকারী কারারক্ষী কর্তৃক এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং হীনব্যাক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার নামান্তর । কোন কুচক্রীমহলের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উষ্কানিতে এ ধরণের অবাস্তব ও কাল্পনিক অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে মর্মে ডিআইজি প্রিজন্স কামাল হোসেন মনে করেন। তিনি প্রতিটি অভিযোগের বিষয়ে চুলচেড়া বিশ্লেষণ করে অভিযোগকারীর আসল রূপ উন্মোচন করার অভিমত ব্যক্ত করেন। অসত্য, বানোয়াট, বাস্তবতাবির্জিত ও কাল্পনিক অভিযোগ সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকের বক্তব্য নেয়ার অনুরোধ জানান। তিনি অভিযোগকারী কারারক্ষী মনিরুল’ কর্তৃক আনীত অভিযোগগুলোর সত্যতা যাচাইয়ের ব্যাপারে তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য অনুরোধ করেন।

কারাগার হাসপাতালে প্রকৃত অসুস্থ অসহায় বন্দীদের ভর্তি না রেখে সুস্থ-সবল, বিত্তশালী ও প্রভাবশালী সুস্থ বন্দীদের এবং বিএনপি নেতা আবু সাঈদ চাঁদকে ভর্তি রাখার বিষয়ে কারা হাসপাতালের সহকারী সার্জন ডা. মিজানুর রহমান, ডা. আরেফিন সাব্বির ও ডা. জুবায়ের আলম বলেন, কারারক্ষী মনিরুল ইসলামের তোলা অভিযোগ সঠিক না। সে মিথ্যাচার করেছে। কারা হাসপাতাল নিয়ম মাফিক চলছে।
অনৈতিক সুবিধা নিয়ে বন্দীদের দেখার সুযোগ ও কারা হাসপাতালে সুস্থ মানুষ রেখে অর্থ বানিজ্য এবং কারারক্ষী মনিরের তোলা অভিযোগ সম্পর্কে সাবেক জেলার নিজাম উদ্দিন বলেন, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আমার বদলী হয়েছে। এখন কে কি বললো তাতে যায় আসে না। তবে এসব অভিযোগের ভিত্তি নাই। কারারক্ষী মনিরুল ইসলাম মিথ্যাচার করছেন।
বন্দিদের নির্যাতন ও তাদের প্রাপ্য রেশন অনুযায়ী খাবার না পাওয়াসহ অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে সাবেক জেল সুপার আব্দুল জলিলকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তাই তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

অসুস্থ্য বন্দী রোগীদের কারা হাসপাতালে না রেখে, সুস্থ রোগী রেখে বানিজ্যের বিষয়ে রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা আবু সাঈদ বলেন, এসব মিথ্যা প্রোপাগাণ্ডার ছড়িয়ে লাভ নাই। আমি নিয়মিত সেখানে ভিজিট করি। সেখানে তিনজন ডাক্তার নিয়মিত রোগী দেখেন। রোগী ছাড়া সেখানে সুস্থ মানুষ থাকার সুযোগ নাই।

কারারক্ষী মনিরুল ইসলামের নিকট তল্লাশি অভিযানে উদ্ধার ৬ টি অবৈধ মালামাল সম্পর্কে জানতে চেয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ঈমান উদ্দিনকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। একারণে তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
সর্বপরি বিষয় নিয়ে অভিযোগ উত্তোলনকারী কারারক্ষী মনিরুল ইসলামকে প্রশ্ন করা হলে তিনি প্রতিটি ঘটনা সত্য বলে জানান। প্রমাণও আছে তাঁর কাছে। তবে এসব ঘটনায় তিনি চাপে আছেন বলেও উল্লেখ করেন। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেন। তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন এমন অভিযোগ তুলেন।

খেয়ালখুশিমত কারা এলাকায় তৈরিকৃত পিসিআর বাসা বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে বরাদ্দ দেওয়াসহ উল্লেখিত অভিযোগ সম্পর্কে ডিআইজি প্রিজন্স কামাল হোসেন বলেন, বাসা বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ কারা কর্তৃপক্ষের এখতিয়ারাধীন। এ ব্যাপারে তাদের বক্তব্য নেয়াটাই যুক্তিযুক্ত হবে।

Next Post

নন্দীগ্রামে নব-নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদ্বয়ের দায়িত্বভার গ্রহণ

বৃহস্পতি জুলাই ৪ , ২০২৪
নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধি: বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলা পরিষদের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। ৪ জুলাই বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে এ দায়িত্ব গ্রহণ, বরণ ও প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদ্বয় পরিষদে এসে পৌঁছালে তাদেরকে ফুল দিয়ে বরণ করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরের […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links