আভা ডেস্ক: নিজে প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থাতেও বিদেশে অধ্যয়নরত ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের লেখাপড়ার খরচ দিতে পারেননি বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হয়েও সন্তানের পড়ার খরচ দিতে পারিনি। আমি প্রধানমন্ত্রী, আমার দ্বিধা হলো- কাকে বলবো টাকা দিতে বা কীভাবে আমি টাকা পাঠাবো বুঝতে পারিনি। কার কাছে দেনা করবো। আমার কারণে তার পড়া হলো না। দুটো সেমিস্টার করে তাকে বিদায় নিতে হলো। তারপর সে চাকুরিতে ঢুকলো। ২০০৭ সালে বউ-মা অসুস্থ হলে দেখতে গেলাম। তখন তাকে অনুরোধ করলাম, কারণ আমার ভেতরে এই জিনিসটা খুব কষ্ট লাগতো যে, আমি প্রধানমন্ত্রী হলেও তার পড়ার খরচ দিতে পরিনি। তখন আমি বললাম তুমি হার্ভার্ডে আবেদন করো। আমি অনুরোধ করার পর সত্যি সে আবেদন করলো। চান্স পেয়ে গেলে। আমি কথা দিয়েছিলাম, ফাস্ট সেমিস্টারের টাকা আমি দেবো। কিন্তু দুর্ভাগ্য, তার আগে গ্রেফতার হয়ে গেলাম। তবে আমি চেয়েছিলাম, চান্স যখন পেয়েছে যেভাবে পারুক চালাক। পরে বাড়ি ছেড়ে দিয়ে তা ভাড়া দিয়ে, সেই ভাড়ার টাকা দিয়ে, কলেজ থেকে দূরে বাসা নিলো সে (সজীব ওয়াজেদ জয়) যাতে সস্তায় বাসা পায়, গাড়ি রেখে মোটরসাইকেল চালিয়ে সে আসতো। রেহানার মেয়ে অক্সফোর্ডে চান্স পেয়েছে, সে পড়াশুনা করলো স্টুডেন্ট লোন নিয়ে, তারপর পড়াশুনা শেষে চাকরি করে লোন শোধ দিলো।’
নিজেদের সন্তানের উচ্চ শিক্ষার জন্য কষ্ট করার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমাদের ছেলেমেয়েরা পড়াশুনা করেছে, চাকুরি করেছে। পড়ার মধ্যে গ্যাপ দিয়ে চাকরি করে আবারও লেখাপড়া করেছে। একবার গ্রাজুয়েশন হয়েছে, কিছুদিন চাকরি করেছে, স্টুডেন্ট লোন নিয়েছে, সেটা শোধ দিয়েছে, আবারও ভর্তি হয়েছে, তারপর মাস্টার্স ডিগ্রি করেছে। আবার সেই লোন শোধ দিয়েছে। এইভাবে পড়েছে।’
নিজ সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়ের উচ্চশিক্ষার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘পড়াশুনা করা অবস্থায়ও ঘণ্টা হিসেবেও কাজ করেছে। প্রতি ঘণ্টা একটা ডলার পেত, সেটা দিয়ে তার চলতো। সব থেকে দুঃখের কথা- আমার ছেলে ব্যাঙ্গালোরে পড়লো, ব্যঙ্গালোর ইউনিভারসিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে গ্রাজুয়েট হলো। এরপর কিছুদিন চাকুরি করলো। এরপর আরও উচ্চশিক্ষার জন্য এমআইটি’তে (আমেরিকা) চান্স পেল । আমি তার শিক্ষার খরচটি দিতে পারিনি। দু’টো সেমিস্টার পড়ার পর নিজে কিছু দিলো, আমাদের কিছু বন্ধুবান্ধব সহযোগিতা করলো। যার জন্য সামনে যেতে পারলো। আর আব্বার বন্ধু আমার ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার সব দায়িত্ব নিয়েছিলেন। উনি বলতেন- তুমি পলিটিক্স করো, এটা আমার ওপর ছেড়ে দাও। তিনি না থাকলে আমি পড়াতে পারতাম না। এমনকি মিশনারি স্কুলে তারা পড়েছে। সাতদিনের মধ্যে সবসময় সবজি বা ডালভাত খেতে হতো, একটি মাত্র দিন শুধু মাংস খেতে পারতো। এভাবে কষ্ট করে করে এরা বড় হয়েছে।’
সকালে (২৭ জুন) রাতে জাতীয় সংসদে ২০১৮-১৯ সালের বাজেট আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী শেথ হাসিনা এসব কথা বলেছেন। এসময় রাষ্ট্রের উন্নয়নের জন্য সরকারের শতবর্ষী পরিকলন্পনার ব্যাপারেও কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
১০০ বছরের ডেল্টা প্লান
একশ’ বছর সামনে রেখে সরকার প্রস্তুতি নিচ্ছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু এখনকার জন্য বা এক বছরের বাজেট নয়, আমরা একশ’ বছরের প্ল্যান নিয়েছি, ডেল্টা প্ল্যান, ২১০০ সাল পর্যন্ত। নদী মাতৃক বাংলাদেশের মানুষকে বাঁচাতে হবে। দেশটাকে উন্নত করার জন্য আমরা এই পরিকল্পনা নিয়েছি। আমাদের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য রয়েছে। সেটাকে মাথায় রেখে বাজেট দিচ্ছি। উন্নয়ন করছি।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী সকালে (বুধবার) তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ডেল্টাপ্লান ২১০০ অনুষ্ঠানের কথা বলেছেন, ‘দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাব, আমাদের অগ্রযাত্রা যেন থেমে না যায়। আমরা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছি। দেশটা যেন সেইভাবে এগিয়ে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘অর্থনীতি যথেষ্ট শক্তিশালী ও মজবুত বলে এতবড় বাজেট দিতে পেরেছি। অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও ছোট ভূখণ্ডের এই অর্জন কিন্তু কম নয়। আমরা চাই, এর ধারাবাহিকতা যেন বজায় থাকে।’
এসময় সরকার প্রধান বলেন, ‘এখন ১৮ হাজার ৩৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছি। গ্যাসের উৎপাদন আমরা বাড়িয়েছি। তবে সেটা যথেষ্ট নয়। এজন্য গ্যাসের সমস্যা সমাধানে এলএনজি আমদানি করছি। বোতল গ্যাস সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছি। এজন্য দাম এখন অনেক কমে গেছে।’
সরকারের সেক্টরভিত্তিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের সুবিধা দেওয়া আমাদের কাজ। সেটার দিকে খেয়াল রেখে আমরা সব কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রাইমারি থেকে পিএইচডি পর্যন্ত ২ কোটি ৩০ লাখ শিক্ষার্থীদের বৃত্তি-উপবৃত্তি দিচ্ছি। প্রাথমিক পর্যায়ের এক কোটি ৩০ লাখ শিক্ষার্থী মোবাইলের মাধ্যমে উপবৃত্তির টাকা পাচ্ছেন। শিক্ষক-অভিভাবক ও প্রশাসনের সহায়তায় শিক্ষার্থীদের টিফিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি আমরা, অন্যের কাছে হাত পাতবো কেন? আমরা নিজেরাই পারি। আমরা যে পারি তা এই টিফিনের ব্যবস্থা করে তা প্রমাণ করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চাই কোনও মানুষ গৃহহারা থাকবে না। সবাইকে ঘর করে দেবো।’
ভারতের সঙ্গে স্থলসীমানা চুক্তি স্বাক্ষরের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘পঁচাত্তরের পর কেউ সাহস পাননি ভারতের কাছে বলতে- স্থলসীমানা চুক্তিটি আপনারা বাস্তবায়ন করুন। সাবেক প্রেসিডেন্ট এখানে বসে আছেন, তার সামনেই বলি। কেউ কিন্তু সাহস পাননি। আমি সরকারে আসার আগেও এটা নিয়ে যেভাবে কথা বলতাম, সরকারে আসার পর আরও সুবিধা হলো, তখন থেকে আলোচনা করে এখন স্থলসীমানা চুক্তিটি বাস্তবায়িত হয়েছে।’
পদ্মা সেতু তত্ত্বাবধায়ক সরকার শুরু করেছে বিরোধী দলীয় নেতার এই বক্তব্য খণ্ডন করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণকাজ কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার করেনি। ২০০১ সালের জুলাই মাসে আমি প্রথম ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি। আমি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন কেন করলাম, এই জন্য বিএনপি তা বন্ধ করে দিলো।’
উন্নয়ন কাজের দেরির ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা যে কাজ করি তা উন্নত মানের করতে চাই বলেই সময়ও লাগবে অর্থও লাগবে। আমরা সস্তার সাত অবস্থা করতে চাই না।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘স্বাধীনতার সুফল জনগণের হাতে পৌঁছে দিতে হবে। বাংলাদেশটা যেন উন্নত হয়। আমার জীবনের কোনও চাওয়া-পাওয়া নেই। আমার চিন্তা দেশের জন্য কী করবো, দেশের মানুষের জন্য কী কাজ করবো।’
বাংলা ট্রিউব্রুন