আভা ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর টেকসই ব্যবস্থাপনা এবং সমুদ্র ও উপকূলীয় অঞ্চলের প্রতিবেশ সুরক্ষার জন্য জি-৭ দেশগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্ব উন্নয়নের আহ্বান জানিয়েছেন। শনিবার কানাডার কুইবেকের লা মালবাইয়ের একটি হোটেলে জি-৭ আউটরিচ সম্মেলনে ‘বিশ্ব মহাসাগর বিষয়াবলি’ শীর্ষক সভায় তিনি এ আহ্বান জানিয়ে বলেন, নীল পানি আমাদের জনগণের কাছে একটি ঐতিহ্য। সময়ের দাবি অনুযায়ী আমরা আমাদের উপসাগরকে সংরক্ষণ ও সুরক্ষার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এদিকে, গতকাল রোববার কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কানাডার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১১টায় কুইবেকের হোটেল শ্যাতো ফঁতেনেকে তাদের এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জি-সেভেন আউটরিচ সম্মেলনে অংশ নিতে যাওয়া শেখ হাসিনা কুইবেকের এই হোটেলেই অবস্থান করছিলেন। বৈঠকে দুই নেতা রোহিঙ্গা ইস্যুসহ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্নিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। খবর বাসস ও ইউএনবির।
ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধের শান্তিপূর্ণ মীমাংসার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ‘বিশ্ব মহাসাগর বিষয়াবলি’ শীর্ষক সভায় প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, বর্জ্য নিক্ষেপ এবং সাগরের জল অম্লীয় হয়ে যাওয়াসহ জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশের ৭৫টি উপকূলীয় দ্বীপ ডুবে যাওয়ার পর্যায়ে রয়েছে এবং নদীগুলোতে সাগরের লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়ায় হুমকির মুখে পড়েছে। তিনি বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী প্রায় দুই কোটি লোকের বাস্তুভিটা স্থানান্তরের ঝুঁকিতে রয়েছে। তাদের জীবিকার সুযোগ সীমিত এবং মহাসাগরীয় চ্যালেঞ্জ ও জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে তাদের খাপ খাইয়ে চলার ক্ষমতা খুবই সীমিত।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সর্বত্র শান্তি, স্থিতিশীলতা ও জনগণের স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করতে টেকসই উন্নয়নের ওপর ভিত্তি করে সামুদ্রিক নীতি গ্রহণ করেছি। এ সময় তিনি জি-৭ দেশগুলোকে তাদের উদ্ভাবন ও সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে সমুদ্র সম্পদের টেকসই উন্নয়নের সুরক্ষা প্রদান, সংরক্ষণ এবং কাজে লাগানোর আহ্বান জানান।
মহাসাগরে প্লাস্টিক বর্জ্য নিক্ষেপ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর পরিবর্তে পাটজাতীয় প্রাকৃতিক তন্তুর ব্যবহার বাড়ানো এবং এ ক্ষেত্রে স্বল্প ব্যয়ে পচনশীল জৈবপ্রযুক্তিকে বিকল্প হিসেবে দেখা যেতে পারে।
জলবায়ুবিষয়ক সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্যারিস চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশকে জলবায়ু অর্থ সংস্থানের উন্নয়নে যুক্ত করা এবং সহায়তা বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো দেশের কৃষি, জনস্বাস্থ্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং স্থানান্তর প্রভৃতি খাতে সহায়তা প্রয়োজন। তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের সঙ্গে মানিয়ে নিতে দরিদ্র ও সর্বাধিক ঝুঁকির মুখে থাকা দেশগুলোর সমর্থনের জন্য কানাডা সরকারের অঙ্গীকারের প্রশংসা করে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি মোকাবেলায় উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সাহায্য করার জন্য কানাডা আগামী পাঁচ বছরে ২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেবে। আর গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডের জন্য দেবে ৩০০ মিলিয়ন ডলার।
গতকাল ট্রুডোর সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর কুইবেক থেকে টরন্টো যাওয়ার কথা। সেখানে বিকেলে তার প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কর্মসূচি ছিল। টরন্টো থেকে প্রধানমন্ত্রী দেশের উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে আজ সোমবার সকালে কানাডার মিয়ানমার বিষয়ক দূত বব রে, কানাডার সাসকাচোয়ান প্রদেশের উপ- প্রধানমন্ত্রী জেরেমি হ্যারিসন এবং কমার্শিয়াল কো-অপারেশন অব কানাডার প্রেসিডেন্ট মার্টিন জাবলোকি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। কানাডার স্থানীয় সময় সোমবার দুপুরে টরন্টো থেকে দেশের পথে রওনা হবেন প্রধানমন্ত্রী। দুবাইয়ে যাত্রাবিরতি করে মঙ্গলবার রাতে তার ঢাকা পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
সমকাল