নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ঘোষণা আসার পরপরই শুরু হয়েছে বিভিন্ন দলের তৎপরতা। বিশেষ করে বৃহৎ দুই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে এ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে আলোচনা, উৎসাহ-উদ্দীপনা। জাতীয় পার্টি, জামায়াত, নাগিরিক ভাবনাসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন থেকেও প্রার্থীদেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। জাতীয় পার্টি প্রথমে প্রার্থী দিতে না চাইলেও কাল সন্ধ্যায় হঠাৎ করে প্রার্থীতা ঘোষণা করে। ফলে রাসিক নির্বাচন নিয়ে চলছে নানা হিসেব-নিকেশ।
আওয়ামী লীগ বলছে, তারা রাজশাহী সিটি নির্বাচন নিয়ে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছে। ফলে নির্বাচন নিয়ে তারা উন্মুখ হয়ে আছে। রাজশাহীবাসী উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত গত পাঁচ বছর। সেখান থেকে উত্তরণে এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে সবাই অধির আগ্রহে। নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হওয়ায় দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে।
অন্যদিকে বিএনপি বলছে, তারা এ নির্বাচনে অংশ নিবে কি না—তা এখনো নিশ্চিত নয়। খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর আগামী সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে কোনো লাভ হবে না বলেও মনে করছে বিএনপি।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ৩০ জুলাই রাজশাহীসহ তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তফসিল ঘোষণা করা হবে আগামী ১৩ জুন। সে অনুযায়ী ২৪ জুন মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন এবং প্রত্যাহারের সময় ৯ জুলাই পর্যন্ত। এর আগে ২০১৩ সালের ১৫ জুন রাজশাহীসহ চার সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল প্রায় ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনকে পরাজিত করেন। তবে রাজশাহী সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথম দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, ‘বিএনপি একটি উদার গণতান্ত্রিক দল। এর জন্য এই সরকারের অধীনে সবগুলো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। সেই হিসেবে খুলনা সিটি নির্বাচনেও অংশ নিয়েছে বিএনপি। কিন্তু খুলনা সিটি নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির মাধ্যমে ভোটকে কলঙ্কিত করা হয়েছে। এ অবস্থায় গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আগে থেকে অংশ নেওয়ার কথা থাকায় সেখানে বিএনপি প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। ওই নির্বাচনের পর রাজশাহী সিটি নির্বাচনে অংশ নিব কি না তা কেন্দ্র থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
মিনু বলেন, ‘বিএনপি দেশের বড় রাজনৈতিক দল। রাজশাহীতে বিএনপির শক্ত অবস্থান আছে। এখানে নির্বাচন এবং আন্দোলন দুটি করার জন্যই আমরা সব সময় প্রস্তুত। তবে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তই জানাবে আমরা এ নির্বাচনে অংশ নিব কি না।’
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র ও মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, ‘এ নির্বাচন কমিশন যেভাবে সরকারের আজ্ঞাবহে পরিণত হয়েছে, তাতে আমরা কিভাবে অংশ নিব! নির্বাচনী মাঠে সেনাবাহিনী চাইলে দেওয়া হচ্ছে না। অথচ আরপিও সংশোধন করে তাদের এমপিদের নির্বাচনী গণসংযোগে নামতে দেওয়া হচ্ছে। তাহলে তো আর নির্বাচনী পরিবেশ থাকছে না।’
মেয়র বলেন, খুলনায় যেভাবে ভোট ডাকাতি হলো, তাহলে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে আমাদের লাভ কি? কাজেই আগামী সিটি নির্বাচনে আমরা অংশ নিব কি না তা নিশ্চিত নয়।’
অন্যদিকে সাবেক মেয়র ও রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, দলীয় সভানেত্রীর সবুজ সংকেত পেয়ে আমি গত প্রায় ছয় মাস ধরে নির্বাচনের মাঠে কাজ করে চলেছি। আমাদের নেতাকর্মীরাও নির্বাচনের জন্য এরই মধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করে রেখেছে। পাড়া-মহল্লায় এরই মধ্যে আমরা সভা-উঠান বৈঠকসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছি। সদস্য সংগ্রহের পাশাপাশি আমরা নির্বাচনী প্রস্তুতিও এগিয়ে নিয়েছি। কাজেই আমরা সিটি নির্বাচন করতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আমাদের নেতাকর্মীরাও এ নির্বাচন ঘিরে উন্মুখ হয়ে আছে।’
তিনি আরো বলেন, গত পাঁচ বছর ধরে রাজশাহীবাসী উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হয়ে আছে। এই ভুল নগরবাসী এখন বুঝতে পারছে। নগরবাসী এবার আর দ্বিতীয় ভুল করতে চায় না। তাই উন্নয়নের স্বার্থে নির্বাচনের জন্য নগরবাসীও প্রস্তুত হয়ে আছে। তাদের কাছ থেকে আমরা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।’