নিজস্ব প্রতিবেদক, নাটোর:
এলিট ফোর্স র্যাব-৫ এর নামে নাটোরে চাঁদাবাজির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। র্যাবের নাম ভাঙ্গিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে হুমকি প্রদান এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা আদায় করছে এক শ্রেণীর প্রতারক চক্র। এছাড়া চাঁদা না দিলে মাদক ব্যবসায় ফাঁসানো হবে এমনও হুমকি দেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি র্যাবের নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজির বিষয়টি নজরে আসলে প্রতারক চক্রদের ধরতে মাঠে নেমেছে র্যাব-৫ নাটোর ক্যাম্পের সদস্যরা। ইতোমধ্যে প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে তারা। জব্দ করা হয়েছে চাঁদাবাজির টাকা। আজ মঙ্গলবারও র্যাবের নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদবাজির করার সময় ১০হাজার টাকাসহ দুইজনকে আটক করেছে র্যাব। এসময় মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে।
আটক দুজন হচ্ছে, নাটোর সদর উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের মৃত আবুল হামিদের ছেলে মোঃ লিটন (৩২) এবং একই উপজেলার সিংহারদহ এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে আল মামুন ফিরোজ (৩৮)।
সূত্র জানায়, র্যাবের মাদকবিরোধি অভিযানের সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণীর প্রতারক চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। র্যাবের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রতারক চক্ররা বিভিন্ন জনকে ভয়ভীতি এবং হুমকি দিয়ে চাঁদা আদায় করছে। চাঁদা না দিলে মাদক মামলায় জড়িয়ে দেওয়ারও হুমকি দেয়া হচ্ছে অনেক সময়। এই অবস্থায় সম্প্রতি একটি ঘটনা নজরে আসে র্যাব-৫ নাটোর ক্যাম্পে। র্যাবের নামে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে এমন অভিযোগ আসলে নাটোর ক্যাম্পের কমান্ডার মেজর শিবলী মোস্তফা অন্য সদস্যদের নিয়ে মাঠে নামেন।
গত ৩০ জুন রাতে বড়াইগ্রাম উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের মৃত আনোয়ার হোসেনের ছেলে সালাম শেখ নিজেকে র্যাব-৫ এর সদস্য পরিচয় দিয়ে নাটোর শহরের কানাইখালী মহল্লার পরেশ চন্দ্র ঘোষের ছেলে প্রনব কুমার ঘোষ ও একই এলাকার মৃত আবুল হোসেনের ছেলে আবুল কালামকে মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে র্যাবের কাছে ধরিয়ে দেবে এমন ভয়ভীতি প্রদর্শন করে তাদের কাছ থেকে ৭৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করে। ভয়ে পরেশ চন্দ্র ঘোষ ও আবুল কালাম প্রথম দফায় সালাম শেখকে ৭০ হাজার টাকা চাঁদা প্রদান করে। বিষয়টি র্যাব নাটোর ক্যাম্পে অবহিত করা হলে দ্বিতীয় দফায় পাঁচ হাজার টাকা গত ৩০ জুন রাতে পরিশোধের সময় রাত ১১টার দিকে সদর উপজেলার আহম্মেদপুর বাজার সংলগ্ন ব্রীজের কাছ থেকে র্যাব-৫, সিপিসি-২ কার্যালয়ের কমান্ডার শিবলী মোস্তফার নেতৃত্বে র্যাব-৫ এর সদস্যরা তাকে আটক করে। পরে রাতেই আটককৃত সালাম শেখকে নাটোর সদর থানায় সোপর্দ করা হয়।
এছাড়া কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলার ভাদুরপাড়া গোলাপনগর গ্রামের মৃত চনু মিয়ার ছেলে মইনুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে র্যাব পরিচয় দিয়ে ভয়ভীতি এবং হুমকি দিয়ে প্রতিমাসে ১০হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করে আসছিল লিটন এবং মামুন ফিরোজ নামের দুই প্রতারক চক্র। বেশ কয়েকবার চাঁদার টাকাও পরিশোধ করে ভুক্তভোড়ি মইনুল ইসলাম। পরে বিষয়টি র্যাব-৫নাটোর ক্যাম্পের কমান্ডারকে জানালে মঙ্গলবার দুপুরে নাটোর প্রেসক্লাবের সামনে থেকে চাঁদার ১০হাজার টাকা সহ লিটনকে আটক করে র্যাব। পরে তার দেওয়া স্কীকারোক্তি অনুযায়ী সদর উপজেলাল কাফুরিয়া থেকে অপর চাঁদাবাজ মামুন ফিরোজকে আটক করা হয়। এ সময় চাঁদাবাজির টাকা সহ মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় নাটোর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এবিষয়ে র্যাব-৫ নাটোর ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার মেজর শিবলী মোস্তফা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং র্যাব মহাপরিচালকের নির্দেশে সারা দেশের মতো নাটোরেও মাদক বিরোধি অভিযান চলছে। এই অভিযানের মধ্যে এক শ্রেণীর প্রতারক চক্রও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা র্যাবের নাম পরিচয় ব্যবহার করে সাধারণ মানুষদের জিম্মি করে চাঁদা আদায় করছে। এতে করে র্যাবের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে এক শ্রেণীর অসাধু প্রতারক চক্র। বিষয়টি নজরে আসলে আমরা এই প্রতারক চক্রকে ধরতে মাঠে নেমেছি। ইতোমধ্যে তিন জনকে আটক করে আইনের মাধ্যমে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। চক্রের বাঁকি সদস্যেরা খুব শিঘ্রই আটক করা হবে।