মুসলিম সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব খুশীর ঈদের আর মাত্র কদিন বাকি আছে। নওগাঁয় ইতোমধ্যে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। ফুটপাত থেকে শুরু করে বহুতল শপিং কমপ্লেক্স সব জায়গাতেই শিশু ও নারী-পুরুষের পদচারণায় সরগম এবং উপচেপড়া ভির বিপণিবিতানগুলো। ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ঈদবাজার উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা বিপণিবিতানগুলো আলোকসজ্জা করেছেন। সকাল থেকে অনেক রাত পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। তবে বিপনী বিতান গুলো বিকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ক্রেতা ও দর্শণার্থী রুপ নিচ্ছে জন সমূদ্রে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার বিক্রি বেশি। রোজার শুরু থেকেই এবার মার্কেটে কেনাকাটা জমে উঠলেও দিন যত যাচ্ছে ক্রেতাদের ভীড় তত বাড়ছে। বিক্রয় কর্মীদের এখন দম ফেলানোর সময় নেই। ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে শুক্রবারেও খোলা থাকছে শহরের বিপণিবিতানগুলো। এখন পর্যন্ত বেচাকেনা নিয়ে সন্তুষ্ট বিক্রেতারা। তবে দোকানদাররা জিনিসপত্রের দাম বেশি চাচ্ছে বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।
সরেজমিনে গতকাল শহরের দেওয়ান বাজার, আনন্দবাজার শপিং কমপ্লেক্স, জহির প্লাজা, মক্কা মার্কেট, শুভ প্লাজা, ইসলাম মার্কেট, সৌদিয়া সুপার প্লাজা, মাজেদা সুপার মার্কেট ইত্যাদি অভিজাত মার্কেটে করা হয়েছে আলোকসজ্জা। বিকেলে এবং সন্ধ্যার পর এসব মার্কেটে প্রচন্ড ভীড় দেখা গেছে। কাপড়ের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভীড় সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে। তার মধ্যে আয়োজনের ভিন্নতার কারণে আসমান বিগবাজার, শিলামনি, শিপলু বুুটিকস, বাঁকুড়া বস্ত্রালয়, কুমাখালী বস্ত্রালয়, পালকী বুটিকস, প্রিয়া ফ্যাশন সহ বেশ কিছু দোকানে ক্রেতারা সবচেয়ে বেশি ভীড় জমাচ্ছেন। বিপণিবিতানগুলোতে নারী ও শিশুদের ভীড় বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ছোট-বড় সব বয়সী মেয়েদের জন্য বিভিন্ন ধরণের থ্রি পিস, টপস, জিপসি, ফ্লোর টাচ নামের পোশাক রয়েছে বিপণিবিতানগুলোতে। এসব পোশাক ১০০০ থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া তরুণীদের হাল ফ্যাশনের বিভিন্ন ধরণের গাউন, ফ্রগ ও লেহেঙ্গা চাহিদাও রয়েছে প্রচুর। ভারতীয় টিভি সিরিয়াল ‘ভজ গোবিন্দ’ নাটকের চরিত্র ডালি চৌধুরী। ওই চরিত্রের নামে দোকানগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে ডালি গাউন ও ডালি স্কার্ট। এই গাউন ও স্কার্ট বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকায়। এছাড়া পদ্মাবত সিনেমার চরিত্র রাণী পদ্মাবতীর নামে বাজারে আসা ‘পদ্মাবতী লেহেঙ্গা’ তরুণীদের মাঝে বেশ সাঁড়া ফেলেছে। এই লেহেঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকায়। ছেলেদের সুতি পাজামা-পাঞ্জাবী ১ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
আনন্দবাজার শপিং কমপ্লেক্সের পোশাকের দোকান শিলামনির বিক্রয়কর্মী রনি তালুকদার বলেন, ‘ভজ গোবিন্দ নাটকের নায়িকা ডালি চৌধুরী যে সব গাউন ও স্কার্ট পড়েছে মেয়েরা ওই পোশাকগুলো বেশি কিনছে। এইবার ডালি গাউন ও স্কার্ট হিট। শুধু বড়রা না ছোটদের জন্যও এই পোশাক আছে। এছাড়া পদ্মাবতী লেহেঙ্গাও ভালো বিক্রি হচ্ছে।’
দেওয়ান বাজার মার্কেটের আসমান বিগবাজার দোকানের সত্ত্বাধিকারী ওহিদুর রহমান বলেন, ‘দশ রমজানের পর থেকেই এবার ঈদের কেনাকেটা পুরো দমে জমে উঠেছে। ঈদকে কেন্দ্র করে ব্যবসা ভালই হচ্ছে। আমাদের দোকানে সব ধরণের কালেকশন রয়েছে। ঈদ উপলক্ষে ক্রেতাদের হাল ফ্যাশনের কথা মাথায় রেখে দোকানে বিভিন্ন ধরণ ও দামের পোশাকের সমাহার রেখেছি। এর মধ্যে তরুণীদের বেশি পছন্দ দেখা যাচ্ছে ডালি গাউন-এর প্রতি।’
ঈদের কেনাকাটা করতে পত্মীতলা উপজেলা থেকে তিন মেয়েকে সঙ্গে করে নওগাঁ শহরে এসেছেন রওশন আরা বেগম। গতকাল দুপুরে শহরের দেওয়ানবাজার মার্কেটে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষে বড় ও মেঝো মেয়ে বায়না ধরেছে ডালি গাউন কিনে দিতে হবে। আর ছোট মেয়েটার পছন্দ ডালি স্কার্ট। তিনটে জামা কিনতে প্রায় ১২ হাজার টাকা খরচ হলো। মেয়েদের আবদার পূরণ করতে দেওলিয়া হয়ে গেলাম।’
কাপড়পট্টি মার্কেটের থান কাপড় ও ছিট কাপড় ব্যবসায়ী শাপলা ক্লথ স্টোরের মালিক জিহাদ আলম বলেন, ‘সাধারণত রোজার শুরু থেকেই ছিট কাপড়ের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের আনাগোনা থাকে। এবারেও তার ব্যতয় হয়নি। কারণ, কাপড়ের ছিট কিনে সেগুলো তৈরি করতে সময় লাগে, এজন্য ক্রেতারা ঈদকে কেন্দ্র করে একটু আগেভাগেই কেনাকাটা সেরে থাকেন। এবার যেভাবে বেচাকেনা হচ্ছে তাতে আমরা খুশি।’
নওগাঁ পোশাক মালিক সমিতির সভাপতি সাজাহান আলী বলেন, ‘নওগাঁয় বেশ কিছু ভাল মানের তৈরি পোশাক বিক্রির দোকান গড়ে উঠেছে। এসব দোকানগুলোতে ক্রেতাদের রুচি এবং ফ্যাশনের কথা মাথায় রেখে বিক্রেতারা পণ্যের সমাহার রাখছেন। আর ছিট কাপড়ের জন্য আগে থেকেই নওগাঁর একটা সুনাম রয়েছে। ফলে নওগাঁর লোকজনকে কেনাকাটার জন্য বাইরের শহরে যেতে হয় না।’