আভা ডেস্ক : শুরু হয়ে যাচ্ছে বিশ্বকাপ। ক্লাব, চায়ের দোকানে কিংবা সোশ্যাল মিডিয়া— উত্তাল হয়ে উঠেছে ফুটবল-গল্প। মাঠের সবুজ ছুঁয়ে সে আলোচনা অবশ্য পৌঁছে যাবে আরও অন্য সব ব্যাপারে। ’৮৬-র মারাদোনার কথা উঠে এলেই যেমন শোনা যাবে তাঁর নেশা করা কিংবা এই প্রৌঢ় বয়সেও হাঁটুর বয়সী বান্ধবীদের সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম করার গল্প। হয়ত সেই আলোচনার সূত্র ধরেই উঠে আসবেন সিআর সেভেন। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর রঙিন যৌন জীবনের গল্প।
মাঠে যাঁর হরিণ-দৌড়ে মত্ত হয়ে ওঠে গ্যালারি, তাঁরই শরীরী আবেদনে মুগ্ধ সুন্দরীরা। সেই তালিকায় রয়েছে দুনিয়া কাঁপানো সব নাম। কিম কার্দেশিয়ান থেকে প্যারিস হিলটন। সারা দুনিয়ার পুরুষ হৃদয় মত্ত যাঁদের কটাক্ষে, সেই মেয়েরাই মুগ্ধ রোনাল্ডোর জাদুতে। ফুটবলের জাদুকরকে ঘিরে সেই সব রঙিন সম্পর্কের গল্প উড়ে বেড়ায় প্রজাপতির মতো।
সম্রাট ও সুন্দরী। ছবি: রোনাল্ডোর ইনস্টাগ্রাম থেকে।
এখনও বিয়ে হয়নি রোনাল্ডোর। তবে এরই মধ্যে চারটি সন্তান তাঁর। বর্তমান প্রেমিকা জর্জিনা রডরিগেজের গর্ভে জন্ম নিয়েছে একটি কন্যাসন্তান। এ ছাড়াও আরও তিনটি সন্তান রয়েছে রোনাল্ডোর। ২০১০-এর জুলাইতে এক পুত্র সন্তানের বাবা হন সিআর সেভেন। ২০১৫-এ জানুয়ারিতে আবার সামনে আসে তাঁর যমজ সন্তানের খবর। কিন্তু কোনও ক্ষেত্রেই সন্তানদের মা কে তা প্রকাশ্যে আনতে চাননি রোনাল্ডো।
২০১০ থেকে ২০১৫— ইরিনা শায়েকের সঙ্গে লিভ ইন। তার পর ২০১৬ থেকে জর্জিনা রডরিগেজ। কিন্তু কেবল তো এই দু’জনই নয়। বারে বারে নানাজনের সঙ্গে দেখা গিয়েছে তাঁকে। ছড়িয়েছে নানা গসিপ। কখনও অ্যান্ড্রেসা উরাচ। কখনও গেমমা অ্যাটকিনসন। কিম কার্দেশিয়ান। প্যারিস হিলটন। ডাকসাইটে সুন্দরীদের হৃদয় জয় করেছেন রোনাল্ডো। এর কোনটা গুজব, কোনটা সত্যি— তা অবশ্য আমজনতার অজানা। কিন্তু পুরোটাই বানানো— এমন দাবি কেউ করেনি।
বাবা রোনাল্ডো। ছবি: রোনাল্ডোর ইনস্টাগ্রাম থেকে।
যেমন প্রাক্তন ‘মিস বামবাম’ নাতাশা। জর্জিনা রডরিগেজেরে গর্ভে রোনাল্ডোর কন্যা সন্তানের জন্ম নেওয়ার ঠিক আগে আগেই নাতাশা বিস্ফোরণ ঘটান। তিনি বলেন, ইরিনা শায়েকের সঙ্গে বিচ্ছেদের পরে রোনাল্ডো নাকি মেয়েদের সঙ্গে ‘ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড’ করে বেড়াতেন! ঠিক সেইভাবেই নাকি নাতাশাকেও তিনি কাছে পেতে চেয়েছিলেন। নাতাশা তাঁর খোলামেলা ছবি পাঠাতেন রোনাল্ডোকে। রোনাল্ডোও সেই ছবি দেখে নানা রকম আদিরসাত্মক মন্তব্য করতেন। ক্রমে সম্পর্ক আরও গভীরে যায়। জর্জিনা যখন কয়েক মাসের অন্ত্বসত্ত্বা, সেই সময়ে নাকি তাঁরা শরীরী মিলনে লিপ্ত হয়েছিলেন, এমনই দাবি ছিল নাতাশার।
ক্ষুব্ধ নাতাশা জানান, এর পরেই তাঁর সঙ্গে সম্পর্কে ইতি টানেন রোনাল্ডো। তাঁর নম্বর ব্লক করে দেন তিনি। নাতাশার বক্তব্য, এর পরই নাকি তিনি বুঝতে পারেন গত দু’বছর ধরে তাঁর সঙ্গে প্রেমের খেলা খেলেছেন রোনাল্ডো। তার পর প্রয়োজন ফুরলে ছুড়ে ফেলে দিয়েছেন। হতাশ নাতাশা বলেন, ‘‘রোনাল্ডো আমার জীবন নষ্ট করে দিয়েছেন।’’
নাতাশার দাবি আদৌ কতটা সত্যি, তা জানা যায়নি। কিন্তু এমনই নানা কিসসা জড়িয়ে রয়েছে রোনাল্ডোকে। মাঠে তাঁর নিখুঁত ড্রিবলিং, চকিত পাস আর তিনকাঠি চেনার ক্ষমতার মতোই মাঠের বাইরেও বারে বারে জীবন জুড়ে যৌনতার উদযাপনের কাহিনি।
কেবল নারীসঙ্গ নয়, রোনাল্ডো বাই সেক্সুয়াল, এমন গুঞ্জনও শোনা গিয়েছে। মরক্কোর কিক বক্সার-এর সঙ্গে তাঁর সমকামী সম্পর্ক রয়েছে খবরে শিরোনাম হয়েছে। উড়েছে রসালো গল্প। তবে তার সত্যাসত্য নিয়ে মুখ খোলেননি রিয়াল-তারকা।
জুনিয়র ও সিনিয়র, দুই রোনাল্ডো। ছবি: রোনাল্ডোর ইনস্টাগ্রাম থেকে।
অর্থাৎ রোনাল্ডোর মধ্যে নানা সত্তা। কখনও তিনি ক্যাসানোভা আবার কখনও তিনি সমলিঙ্গে উৎসাহী। কিন্তু সেই বিচার নেহাতই সরলরৈখিক। পর্তুগালের মেগাস্টার ফুটবলারের বাৎসল্য মাখা পিতৃত্বকেও তো ফেলে দেওয়া যায় না। তিন-তিনজন সন্তানের বাবা হিসেবে নিজে পরিচয় দেওয়া, তাদের প্রতিপালন করা, আর কখনওই তাদের মায়েদের নাম সামনে না আনা— এই ব্যাপারটা ভাবলে কিন্তু স্পষ্ট, যৌনতামুখী এক উদাস প্রেমিক মাত্র নন রোনাল্ডো। তার বাইরেও অনেক কিছু। তাঁর ব্যাপ্তি মাপা অত সহজ নয়। বক্সের ভিতরে তিনি যেমন, ব্যক্তিজীবনেও তাই— আনপ্রেডিক্টেবল।
ছেলে জুনিয়র রোনাল্ডো বড় প্রিয় রোনাল্ডোর। ক’দিন আগেই লিসবনে আলজিরিয়ার সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচে বাবার খেলা শেষ হতেই ছেলে নেমে পড়ে সবুজ গালচেতে। দুরন্ত গোল করে চমকে দেয় সকলকে। এই জুনিয়রের মা কে, তা নিয়ে মিডিয়ার জল্পনা কম নয়। শোনা যায়, ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে থাকাকালীন এক মার্কিন হোটেল কর্মীর সঙ্গে শরীরী সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন রোনাল্ডো। তারই ফলশ্রুতি জুনিয়রের জন্ম। শোনা যায়, ওই মহিলা গর্ভবতী হয়ে পড়ার পরে যোগাযোগ করেন রোনাল্ডোর সঙ্গে। ডিএনএ পরীক্ষায় রোনাল্ডোর পিতৃত্ব যখন নিশ্চিত হয়, তখনই পর্তুগিজ মহাতারকা বিষয়টি মেনে নেন। ১ কোটি পাউন্ড ওই মহিলাকে দিয়ে রোনাল্ডো ছেলেকে নিজের কাস্টডিতে নিয়ে নেন। ছেলের সঙ্গে এখন দারুণ সম্পর্ক রোনাল্ডোর।
শরীরী প্রেমিক থেকে স্নেহশীল পিতা — রোনাল্ডোর বর্ণময় জীবনের কাহিনি যেন এক আশ্চর্য রূপকথা। তাঁর মাঠের কীর্তির মতোই সেও কম জমজমাট নয়।