আভা ডেস্ক: ঈদ উপলক্ষে অগ্রিম টিকিট কাটা যাত্রীরা ১০ জুন থেকে যাত্রা শুরু করেছে। ১২ জুন পর্যন্ত অধিকাংশ ট্রেন শিডিউল অনুযায়ী চলাচল করছিল। কিন্তু বুধবার ১৩ জুন ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া এবং ঢাকায় আসা বিভিন্ন ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে।
চলমান ট্রেনের সঙ্গে ‘ঈদ স্পেশাল ট্রেন’ এর শিডিউল বিপর্যয় চরমে উঠছে। প্রায় ট্রেনেই দেড় ঘণ্টা থেকে ২ ঘণ্টা পর্যন্ত বিলম্বে চলাচল করছে। বুধবার ও বৃহস্পতিবার শিডিউল বিপর্যয় আরও ঘটতে পারে, আশঙ্কা করছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে বুধবার দুপুরে ঘরমুখো যাত্রীদের বিদায় জানাতে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে আসেন রেলপথ মন্ত্রীসহ রেলওয়ে কর্মকর্তারা।
তবে এ বিষয়ে রেলপথ সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন জানান, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে ঈদ উপলক্ষে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সবচেয়ে জরুরি। ১ ঘণ্টা কিংবা ৩০ মিনিট বিলম্বে ট্রেন চলাচল করাটাকে খুব একটা দুর্ভোগ মনে করছে না রেল। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়ে নির্ধারিত গতির চেয়ে কম গতিতে ট্রেন চালাতে হচ্ছে। তাছাড়া প্রতিটি ট্রেনই অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে।
তিনি বলেন, এক একটি স্টেশনে নির্ধারিত যাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত সময় দিতে হচ্ছে। প্রচণ্ড ভিড়ে যাত্রীদের ওঠানামায় বেশি সময় লাগছে। ফলে স্বাভাবিক নিয়মেই নির্ধারিত সময় ট্রেন চালানো অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হচ্ছে না। ছাদে, ইঞ্জিনে যাত্রীদের প্রচণ্ড ভিড়। গতি বাড়িয়ে কিংবা স্টেশন নির্ধারিত বিরতি দিয়ে ট্রেন চালাতে গেলেই মহাবিপদ হতে পারে, যা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কখনও করতে পারে না।
বুধবার সকাল থেকেই কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীদের ভিড় বাড়তে থাকে। মূলত এক একটি ট্রেন যখন বিলম্বে চলাচল করে তখনই স্টেশনে যাত্রীদের জটলা লেগে যায়। বুধবার থেকে ৯টি ঈদ স্পেশাল ট্রেন বিভিন্ন রুটে চলাচল শুরু করে। স্পেশাল ট্রেনগুলো তিন গুণ যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে। ফলে ট্রেনের চালক কিংবা গার্ড ট্রেন চালাতেই হিমশিম খাচ্ছে। এমন অবস্থায় যাত্রীরা বিভিন্ন ধরনের মতামত প্রকাশ করছেন, কেউ বলছেন ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় মেনে নেয়া যায় না, কেউ বলছেন শিডিউল বিপর্যয় হলেও নিরাপদে যাত্রীরা স্ব-স্ব স্থানে পৌঁছতে পারলেই খুশি।
ঢাকা থেকে দেওয়ানগঞ্জ এক্সপ্রেসটি সকাল ৮.৪৫ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও প্রায় সোয়া ১ ঘণ্টা বিলম্বে ছেড়েছে। লালমনিরহাট স্পেশাল ট্রেনটি ৯.১৫ মিনিটে কমলাপুর স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও তা প্রায় আড়াই ঘণ্টা বিলম্বে ছেড়ে গেছে। তাছাড়া জামালপুর এক্সপ্রেস, তিতাস কমিউটার, নীলসাগর এক্সপ্রেস, দ্রুতযান এক্সপ্রেস, একতা এক্সপ্রেস, সূর্বণা এক্সপ্রেস ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা বিলম্বে কমলাপুর স্টেশন থেকে ছেড়ে গেছে। সকাল থেকে রাত পযর্ন্ত কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে থেকে ৬৪টি ট্রেন ছেড়ে যায় বলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
শাহআলম, কামাল হোসেন, রুবিনা আক্তার, পারভীন, জামাল উদ্দিন, নজরুল ইসলামসহ অন্তত ২০-২৫ জন যাত্রী জানান, ট্রেনে নিরাপদ ভ্রমণ বলেই তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটেছেন। কিন্তু এখন যখন দেখছি ট্রেনও বিলম্বে চলাচল করছে, তাতে কষ্ট পাওয়ার কথাই।
রংপুর, দিনাজপুর ও জামালপুরের বেশ কয়েকজন যাত্রী জানান, কিছু ট্রেন ১ ঘণ্টা ২ ঘণ্টা বিলম্ব চলাচল করলেও তারা খুশি। রাস্তার যে অবস্থা ঢাকা শহর থেকে বের হতেই ২-৩ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। তাছাড়া যানজটে পড়লে তো কথাই নেই। সে হিসেবে ট্রেনের ভ্রমণ খুবই নিরাপদ।
এদিকে কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে প্রায় প্রতিটি ট্রেনের ছাদেই যাত্রীরা উঠছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন নিরুপায়। তাদের সামনেই দরজা-জানালা দিয়ে ছাদে উঠছে লোকজন। কেউ কেউ আবার মই দিয়ে ছাদে উঠছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রেলওয়ে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, তাদের কিছুই করার নেই। কিছু করতে গেলেই যাত্রীরা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। আমরা শুধু অনুরোধ করছি, ছাদে না ওঠার জন্য।
কমলাপুর রেলওয়ে ম্যানেজার সীতাংশ চক্রবর্তী জানান, তৃতীয় দিন যাত্রায় বেশ কয়েকটি ট্রেন বিলম্বে চলাচল করছে। মূলত এসব ট্রেন বিলম্বেই কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে আসছে। তাছাড়া স্টেশনে ট্রেনটি পৌঁছামাত্রই হুমড়ি খেয়ে যাত্রীরা ট্রেনে উঠছে। এক একটি ট্রেনে নির্ধারিত যাত্রীদের চেয়ে অনেক বেশি যাত্রী উঠছে। দীর্ঘ সময় ধরে যাত্রীরা ট্রেনে উঠছে। তাছাড়া যেসব ট্রেনগুলো অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাচ্ছে, সেই ট্রেনগুলো বিলম্বে কমলাপুর স্টেশনে আসছে। কারণ, অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে ট্রেনের চালক নির্ধারিত গতিতে চালাতে পারছে না। ফলে শিডিউল বিপর্যয় হচ্ছে। যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে গতি কমিয়ে, বিরতির সময় বাড়িয়ে ট্রেন চালাতে হচ্ছে।
রেলপথমন্ত্রীর স্টেশন পরিদর্শন ট্রেনে করে ঘরমুখো যাত্রীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রেলপথমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক। সূবর্ণ এক্সপ্রেসসহ বেশ কয়েকটি ট্রেনে থাকা যাত্রীদের সঙ্গে তিনি কথা বলেন এবং ঈদের অগ্রিম শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আজ রেলওয়েতে যে পরিমাণ উন্নয়ন হয়েছে তা কেবল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্যই। প্রধানমন্ত্রী চান রেলওয়ের অমূল পরিবর্তন। তার নির্দেশেই একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে।
শিডিউল বিপর্যয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়েই কিছু কিছু ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটছে। এ সময় রেলপথ সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন, রেলওয়ে মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন, রেলওয়ে শ্রমিক লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবিরসহ রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উৎস
যুগান্তর