জয়পুরহাটে কাগজ কলমে ঠিক থাকলেও

আভা ডেস্ক: জয়পুরহাটের ১৭টি অংশগ্রহণমূলক ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ সেক্টর প্রকল্পের মধ্যে অন্তত ১২টির কার্যক্রম চলছে কাগজে-কলমে। অথচ শুষ্ক মৌসুমে খালের পানি ধরে রেখে ধান, মাছ ও সবজি চাষের মাধ্যমে এলাকার সুফলভোগীদের স্বাবলম্বী করতে ১৯৯৬ সালে জেলায় শুরু হয় এ প্রকল্প। সরকারি হিসেবে যার নির্মাণ ব্যয় ১৫ কোটি ৭৯ লাখ ২৭৯ টাকা। এলাকার কৃষকদের অভিযোগ, অপরিকল্পিতভাবে খাল খনন ও রেগুলেটর (স্লুইসগেট) নির্মাণের পাশাপাশি নিয়মিত মনিটরিংয়ের অভাবে সুফল মিলছে না এসব প্রকল্প থেকে।

জেলার বিভিন্ন মরা খাল এলাকার ৭ হাজার ৯১৪ হেক্টর কৃষি জমিতে শুষ্ক মৌসুমে সেচ কাজ নিশ্চিত করতে পৃথকভাবে গ্রহণ করা হয় ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়নে ১৭টি প্রকল্প। যেখানে প্রকল্প এলাকায় নির্মাণ করা হয় ক্রসড্যাম, রেগুলেটর (স্লুইসগেট) ও প্রকল্প অফিস। খনন করা হয় খালগুলোও। সমবায় সমিতি গঠনের মাধ্যমে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে পরিচালনা করে স্ব স্ব এলাকার ৯ হাজার ৩০ পরিবার সুফল পাওয়ার কথা এসব প্রকল্প থেকে। স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদফতরের মাধ্যমে ১৯৯৬ সাল থেকে এ বছর পর্যন্ত ১৭টি প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হয় ১৫ কোটি ৭৯ লাখ ৭১ হাজার ২৭৯ টাকা। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে খাল খনন ও রেগুলেটর নির্মাণের ফলে শুষ্ক মৌসুমে পানি থাকছে না খালগুলোতে। সঠিক তদারকি না থাকায় কোনও উপকার পাচ্ছেন না প্রকল্প এলাকার মানুষজন।

কালাই উপজেলার আহম্মেদাবাদ-মাত্রাই-উদয়পুর ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত কানমোনা-হারাবতি খালের রোয়াইর এলাকায় ২৫ লাখ ৭৬ হাজার ৬৬১ টাকায় একটি রেগুলেটর (স্লুইসগেট) নির্মাণ করা হয়। আর খাল খননে ব্যয় করা হয় ২৪ লাখ ২৪ হাজার ৭৩৭ টাকা। পানির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, পরিবেশগত ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রকল্প এলাকার কৃষকদের নিয়ে গঠন করা হয় ‘কানমোনা-হারাবতি পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি।’ প্রকল্প গ্রহণ ও সম্পন্ন করার কথা ২০০২ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত। একইভাবে ২০১০ সাল থেকে ২০১৮ সাল মেয়াদে সম্পন্ন করা হয় একই উপজেলার কাদিরপুর বাখড়া খাল প্রকল্প। যেখানে স্লুইসগেট নির্মাণে ব্যয় হয় ২৫ লাখ ৬০ হাজার ৫৩৩ টাকা। আর খালটি খনন করতে ব্যয় হয় ৭ লাখ ৯২ হাজার ৪৭০ টাকা। ওই দুটি প্রকল্পে দেড় হাজার হেক্টর জমিতে শুষ্ক মৌসুমে সেচ সুবিধার পাশাপাশি মাছ ও খাল পাড়ে সবজি চাষে লাভবান হওয়ার কথা এক হাজার ২৩ পরিবারের। কিন্তু বাস্তবতা হলো শুষ্ক মৌসুমে পানিই থাকে না ওইসব খালে। ফলে সেখানে সবজি ও মাছ চাষ তো দূরের কথা স্থানীয় কৃষকরা ওই খালে ধান চাষ করছেন। একই অবস্থা অধিকাংশ প্রকল্পের।

প্রতিটি প্রকল্প সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য প্রকল্প এলাকার উপকারভোগীদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে সমবায় সমিতি। যেগুলো বাস্তবায়ন করা হচ্ছে শুধু কাগজে-কলমে। কৃষকদের অভিযোগ, খালগুলোতে অপরিকল্পিতভাবে স্লুইসগেট নির্মাণ করায় বর্ষা মৌসুমে পানি পার হতে পারে না। প্রতিবন্ধকতার কারণে ভারী বর্ষণ হলেই স্লুইসগেটের দুই পাশের সম্পূর্ণ ফসল তলিয়ে যায়। গেট নির্মাণের আগে এ রকম অবস্থা ছিল না। খাল দিয়ে বর্ষার পানি তখন দ্রুত নিষ্কাশন হওয়ায় কখনও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতো না। তাদের দাবি, সরকারের উদ্দেশ্য ভালো হলেও অপরিকল্পিতভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করায় খালগুলো এখন তাদের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া, খাল খননেও সঠিকভাবে তদারকি করা হয়নি। শুধু খালের মাটি পাড়ে ফেলে খনন সম্পন্ন করা হচ্ছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে পাড়ের মাটিগুলো আবার খালে ধসে পড়ে খাল ভরাট হয়ে যাচ্ছে।

বাখড়া গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ কৃষক আব্দুর রশিদ বলেন, কাদিরপুর-বাখড়া খাল প্রকল্পের বেলগড়িয়া এলাকায় যে স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়েছে, তা জমি থেকে প্রায় ৫-৬ ফুট উঁচু। সে অনুযায়ী খালের দুই পাড় উঁচু করা হয়নি। ফলে ভারী বর্ষণে স্লইসগেটে পানি বাধা পেয়ে ফসলের মাঠ ও বাখড়াসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়। যা আগে হতো না।

ওই এলাকার কৃষক জাহেদুল, শিপন ও আব্দুল আলিম বলেন, শুষ্ক মৌসুমে ফসল চাষ এবং খালের পানিতে সারাবছর মাছ চাষের জন্য খালটি খনন করা হয়। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে খালে পানি থাকে না। বরং খালে ধান চাষ হয়। স্লুইসগেটগুলোর যন্ত্রাংশে মরিচা ধরে অকেজো হয়ে গেছে।

ক্ষেতলাল উপজেলার হারাবতী খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির নির্বাহী সদস্য আব্দুল আলীম জানান, তাদের প্রকল্পে খাল খননে ৭৭ লাখ ৬৯ হাজার ৯২৩ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। অথচ সেই খালে শুষ্ক মৌসুমে পানি থাকছে না। কাজেই খালটি পুনঃখনন করা না হলে এ থেকে কোনও উপকার মিলবে না।

জেলার স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল বিভাগের সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী গোলাম মোর্শেদ বলেন, ‘সেচ সুবিধা ও মাছ চাষের মাধ্যমে কৃষকদের স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে প্রকল্পগুলো গুরুত্ব দিয়ে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সেগুলো সমবায় সমিতির মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে। তার দাবি, প্রকল্পগুলো দেখভাল করার দায়িত্ব সমিতির, চাহিদার ভিত্তিতে তারা শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়নে তাদের সহযোহিতা করছেন।

বাংলা ট্রিবিউন

Next Post

বাজেট অধিবেশন শুরু।

মঙ্গল জুন ৫ , ২০১৮
আভা ডেস্ক: আজ মঙ্গলবার (৫ জুন) বাজেট অধিবেশন শুরু হচ্ছে। বেলা ১১টা থেকে অধিবেশন শুরু হবে। আর আগামী ৭ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আগামী অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদের (১) দফায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে গত ১৬ মে সংসদের এ ২১তম অধিবেশন আহ্বান করেছেন। এ […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links