নিজস্ব প্রতিবেদক :জমেছে রাজশাহীর চতুর্থ জাতীয় উন্নয়ন মেলা। দ্বিতীয় দিনে সকালে কিছুটা দর্শনার্থী কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভরে যায় পুরো মেলা চত্বর। আর বিকেলে মেলা প্রাঙ্গনে নামে দর্শনার্থীদের ঢল। যদিও হালকা বৃষ্টিতে একটু সমস্যা হলেও বৃষ্টি শেষে মানুষ স্বস্তিতে মেলায় ঘুরেছে স্টলগুলোতে। এই উন্নয়ন মেলায় বেড়াতে আসা দর্শনার্থীরা খুশি- সরকারের এই আয়োজনে।
দর্শনার্থীরা জানতে পারছে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন ও সুযোগ সুবিধার কথা। এছাড়া মেলায় বর্তমান সরকারের ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নয়নের রূপকল্প বা উন্নত বাংলাদেশের প্রস্তাবনা সম্পর্কেও জনগণকে জানানো হচ্ছে। সরকার কী কী উন্নয়ন করেছেন, আর আগামিতে কী ধরনের উন্নয়ন করবেন তাও জনগণকে আগে থেকে জানিয়ে দিচ্ছে মেলায় স্থান পাওয়া স্টগুলো থেকে।
এ মেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে সরকারের সফলতা বিষয়ক রিয়েলিটি শো প্রদর্শন এবং মুক্তিযুদ্ধ ও সরকারের সফলতাকে উপজীব্য করে এমন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এছাড়া দর্শনার্থীরা মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপভোগ করছে। এবার মেলায় ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোট মেশিন) নিয়ে স্টলের জাকির জানায়, দর্শনার্থীরা জানতে পারছে ইভিএম ভোটের বিষয়ে। এখানে জানা হচ্ছে ইভিএমে ভোট প্রদানের বিভিন্ন বিষয়। সেই জন্য নিয়ে আসা হয়েছে ডেমোও।
এই স্টলে আসা জাহিদ হাসান জানায়, ইভিএম নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে নেগেটিভ (খারাপ) ধারণা রয়েছে। ইভিএমে ভোট প্রদানের মাধ্যমটি স্বচ্ছ বলে তার মনে হয়। এছাড়া তিনি জানায়, এর ফলে কোনো সমস্যা ছাড়াই দ্রুত নির্বাচন শেষ হবে। ভোট গণনার জন্য আলাদা সময় প্রয়োজন হবে না।
তিনি আরো বলেন, ইভিএমে কেউ ভোট দেয়ার পরে ভুল মনে করেন তিনি ১০ সেকেন্ডের মধ্যে সংশোধন করতে পারবেন। এমন কথাও জানানো হচ্ছে।
এবার মেলায় স্থান পায় আশ্রায়ন-২ প্রকল্পের একটি স্টল। এই স্টলে আসা রাজশাহী মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ফাহমিদা জানায়, মেলায় না আসলে জানতে পারতাম না সরকার কী কী বিষয়ে উন্নয়ন করেছে। আমরা বিভিন্ন সেবা পেতে গিয়ে হয়রানির শিকার হই। এখানে স্ব-স্ব স্টলগুলো থেকে বলে দেয়া হচ্ছে কোন দফতরে কী সুবিধা পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, এই প্রকল্পে সরকার অনেক মানুষকে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছে। সারা দিন খেটে অন্তত বাড়িতে এসে আরামে ঘুমাতে পারবেন। শুধু তাই নয়, তাদের দেয়া হয়েছে ক্ষুদ্র ঋণও। করে দেয়া হয়েছে পুকুর। এছাড়া সংসারের উন্নয়নের জন্য দেয়া হয়েছে গৃহপালিত পশু। এই সব তথ্য আগে জানা ছিলো না। মেলায় এসে জানতে পারলাম।
আশ্রায়ন-২ প্রকল্পের স্টলে থাকা মনিটরিং অফিসার মাহতাবুল ইসলাম জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের মেয়াদে বাংলাদেশে যুগান্তকারী উন্নয়নের বার্তা সবার মাঝে পৌঁছে দিচ্ছে তারা।
তিনি আরো বলেন, এই প্রকল্পের লক্ষ্য ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল অসহায় দারিদ্র জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন, তাদের প্রশিক্ষণ ও ঋণ প্রদানের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহে সক্ষম করা। এছাড়া আয়বর্ধক কার্যক্রম সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র দূরীকরণ করা। মেলায় প্রচুর দর্শনার্থীর সমাগম ঘটছে প্রতিদিন। দর্শনার্থীদের জানা-অজানা ছিলো এই আশ্রায়ণ প্রকল্পের কথা।
অন্যদিকে, সিরাজগঞ্জ থেকে আসা রাহিমা নামের এক দর্শনার্থী বলেন, মেলার সার্বিক পরিবেশ সন্তোষজনক। স্টলগুলো অনেক গুছানো। তার খুব ভালো লেগেছে। এখানে এসে তিনি বিভিন্ন সুবিধার করা জানতে পারলেন। তার জানা ছিলো না রাজশাহী সিটি করপোরেশন সম্বন্ধে। মেলায় এসে তিনি তা জানাতে পেরেছেন।
এছাড়া চোখে পড়বে পদ্মা সেতু, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেট্রোরেল, নব থিয়েটার, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, হাইটেক পার্ক, কৃষি খাতে ব্যাপক সফলতা, গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে উড়াল সেতু স্থাপন ও নির্মাণ কাজ, পায়রা সমুদ্র বন্দর নির্মাণ, পদ্মা সেতুর রেল লিংক নির্মাণ, পরিবেশ সুরক্ষা, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, কুড়িল ফ্লাই ওভার, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচি, মেরিন ড্রাইভসহ ডিজিটাল বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়নের চিত্র সংবলিত ফেস্টুন।
উল্লেখ্য, মেলা প্রাঙ্গনে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত প্রবেশ উন্মুক্ত থাকবে। এবছর অনুষ্ঠিত উন্নয়ন মেলার ১৭৬ টি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন বিষয়ক স্টল শোভা পাচ্ছে।