বংশালে ছাত্রলীগ কর্মী ইমরান হোসেন রকি হত্যার নেপথ্যে রয়েছে তিন বন্ধুর ‘আপত্তিকর ভিডিও’ ধারণ। চলতি বছরের শুরুর দিকে কেরানীগঞ্জে একটি ‘বিশেষ পার্টি’তে অংশ নিয়ে সাব্বির, সজল ও বিজয় তিন পতিতার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়।
এটি গোপনে ভিডিও করেন তাদের বন্ধু ছাত্রলীগ কর্মী ইমরান হোসেন রকি। পরে সেই ভিডিও পুঁজি করে সাব্বিরের কাছে টাকা দাবি করেন রকি। প্রথমে সাব্বির ১ হাজার টাকা দিয়ে ভিডিওটি মুছে দেয়ার অনুরোধ জানায়। কিন্তু রকি ভিডিও রেখে দেয়ায় ক্ষুব্ধ হয় সাব্বির এবং তার অপর দুই বন্ধুকেও বিষয়টি জানায়। ফলে তারাও রকির ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।
একপর্যায়ে তারা রকিকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ৫ এপ্রিল রাতে মাহবুবুর রহমান ওরফে সাব্বির, সালমান হোসেন বিজয় ও ওমর সেলিম সজল রকিকে রাজধানীর নয়াবাজার ইউসুফ মার্কেটের সামনে পিটিয়ে হত্যা করে।
এরপর রকির পরিবার এবং বংশাল থানা পুলিশকে রকি গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় নয়াবাজার ইউসুফ মার্কেটের সামনে পড়ে আছে বলে জানায় খুনিরা। পরে আসামিদের গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করলে তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কোতোয়ালি জোনাল টিমের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) আহসানুজ্জামান এ তথ্য জানিয়েছেন। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি যুগান্তরকে বলেন, চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটানোর পর খুনিরা নিয়মিত পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। এমনকি তারা রকি সম্পর্কে পুলিশকে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহায়তা করেন। কিন্তু ডিবি পুলিশ ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে ছায়াতদন্তে নামে।
ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা নিহতের ভাইকে ডেকে রকি হত্যার বিষয়ে জানতে চাই। কিন্তু তিনি কোনো তথ্যই আমাদের দিতে পারেননি। আমরা তাকে মামলা করার পরমর্শ দিই। তিনি প্রায় ৩৬ ঘণ্টা পর থানায় মামলা করেন। মামলার এজাহার নিয়ে ডিবি বিষয়টি তদন্তে নামে। প্রথমে আমরা সাব্বির, সজল এবং বিজয়ের পরিবারের সদস্যদের ওপর নজর রাখি। এদের মধ্যে বিজয়ের মেয়েবন্ধুকে অতিরিক্ত টেনশন করতে দেখা যায়।
ডিবির এ কর্মকর্তা আসামিদের বরাত দিয়ে যুগান্তরকে আরও বলেন, প্রায় ৬ মাস আগে কেরানীগঞ্জের একটি রিসর্টে ‘পুল পার্টি’ নামে একটি পার্টি হয়। ওই পার্টিতে ১৫-১৬ জন ছেলেমেয়ে অংশ নেয়। এদের মধ্যে সাব্বির, বিজয়, সজল এবং ইমরান হোসেন ওরফে রকিও ছিল। সেখানে খাওয়া-দাওয়া শেষে সাব্বির, বিজয় ও সজল তিন পতিতার সঙ্গে দৈহিক সম্পর্কে মিলিত হয়। এটি তাদের বন্ধু রকি বাইরে থেকে জানালা দিয়ে মোবাইলে ভিডিও করে।
সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) আহসানুজ্জামান আরও বলেন, বিজয়ের মেয়েবন্ধু এবং সাব্বিরের স্ত্রীর কথায় বেশ কিছু অসঙ্গতি পাওয়া যায়। এর ফলে ১০ এপ্রিল বংশাল থানা এলাকা থেকে প্রথমে সাব্বিরকে এবং পরে অপর দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। পরের দিন তাদের আদালতে হাজির করা হয়। তারা খুনির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা জানিয়ে লস্কর সোহেল রানার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
মামলার অগ্রগতি জানিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালি জোনাল টিমের এসআই খোরশেদ আলম যুগান্তরকে বলেন, ঘটনার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কিনা বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। এর সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত থাকলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।