দীর্ঘদিন ধরেই গবেষণায় প্রত্যাশিত ভূমিকা রাখতে পারছে না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পিছিয়ে থাকার কারণ হিসেবে অপ্রতুল বরাদ্দকে দায়ী করে আসছেন বিশ্ববিদ্যালয়-সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু বাস্তব চিত্র হচ্ছে, গবেষণা খাতে যেটুকু বরাদ্দ দেয়া হয়, তার প্রায় অর্ধেকই ব্যয় করতে পারে না দেশের সবচেয়ে প্রাচীন এ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে গবেষণা খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল ১৪ কোটি টাকা। বছর শেষে হিসাব করে দেখা গেছে, খাতটিতে ব্যয় হয়েছে ৮ কোটি ৪২ টাকা। সে হিসাবে গবেষণা খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের ৪০ শতাংশই ব্যয় করতে পারেনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
গবেষণা খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ অব্যয়িত থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ড. কামাল উদ্দীন বলেন, গবেষণা খাতের টাকা শিক্ষকদের ধাপে ধাপে দেয়া হয়। সে কারণে হয়তোবা অব্যয়িত দেখাচ্ছে। তবে এটাও সত্য, গবেষণা খাতে আমাদের যে অর্থ দেয়া হয় সেটি অপ্রতুল। বিশেষ করে বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষকদের গবেষণার জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন হয়। কম বরাদ্দের কারণে আমরা তাদের চাহিদামতো অর্থ দিতে পারি না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন সূত্রে জানা যায়, শিক্ষকদের গবেষণা করতে অর্থ প্রদানের জন্য নোটিস দেয়া হয়। অনেক সময় নির্ধারিত সময়ে প্রস্তাবনা না আসায় পুনরায় নোটিস দিতে হয়। এরপর নির্বাচন করে অর্থ প্রদান করতে কিছু সময়ের প্রয়োজন হয়। প্রক্রিয়াগত ধীরগতির কারণে সব অর্থ ছাড় করা সম্ভব হয় না।
শিক্ষক নিয়োগ ও পদায়নের ক্ষেত্রে গবেষণা ও প্রকাশনা গুরুত্ব না পাওয়ার ফলে শিক্ষকরা গবেষণায় উৎসাহিত হচ্ছেন না বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, গবেষণা না হওয়ার কারণ হিসেবে অনেকেই বরাদ্দ না থাকাকে দায়ী করে। তবে এটিই একমাত্র কারণ নয়। বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় না হওয়ায় বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আমার কাছে মনে হয়, একজন শিক্ষক যদি মানসম্মত গবেষণা ও প্রকাশনা ছাড়াই নামমাত্র প্রকাশনা ব্যবহার করে রাজনৈতিক বিবেচনায় অধ্যাপক হয়ে যান, তাহলে তিনি গবেষণা কার্যক্রমে মনোযোগী হবেন না এটাই স্বাভাবিক।
আসছে ৭৪১ কোটি টাকার বাজেট:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের বার্ষিক অধিবেশন বসছে আগামী বুধবার। সিনেটের এ সভায় আগামী অর্থবছরের জন্য ৭৪১ কোটি টাকার বাজেট পেশ করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট শাখা সূত্রে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা এবং সাধারণ কার্যক্রম পরিচালনায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭৪১ কোটি ১৩ লাখ টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৬৬৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। পরে সংশোধিত বাজেটে আকার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা। সে হিসাবে এ বছর বাজেটের আকার বেড়েছে ২ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
বরাবরের মতো এবারো বাজেটের বড় একটি অংশ ব্যয় হবে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা, পেনশনসহ বিভিন্ন খাতে। এ বছর ৪৩২ কোটি ৯৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আর পেনশনের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১০৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা। বাজেটে আয়ের উৎস হিসেবে দেখানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) অনুদান ও নিজস্ব আয়। এর মধ্যে ইউজিসি দেবে ৬২৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা। নিজস্ব আয় বাবদ ধরা হয়েছে ৭১ কোটি ২৮ লাখ টাকা। সে হিসাবে এ বছর ঘাটতি বাজেট দাঁড়িয়েছে ৪১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
ইউজিসি এ বছর বাজেট নির্দেশনায় বলেছে, সরকারি অর্থ ব্যয়ে সব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা অবলম্বন করতে হবে। মূল বরাদ্দের বাইরে বিশেষ প্রয়োজন ও ইউজিসির পূর্বানুমোদন ছাড়া কোনো জনবল নিয়োগ করা যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের আয় বাজেটে নিজস্ব আয়ের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ভর্তি পরীক্ষার ফরম বিক্রির আয়ের ৪০ ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় তহবিলে জমা দিতে হবে।
উল্লেখ্য, ৪ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স কমিটি ও ৭ জুন সিন্ডিকেট সভায় প্রস্তাবিত বাজেটের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।