আভা ডেস্ক: গণধর্ষণ চেষ্টার অপমান সইতে না পেরে সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে ১৫ বছরের এক এতিম কিশোরী আত্মহত্যা করেছে। নিহতের নাম সোমা খানম। সে উপজেলার রাজনগর ইউনিয়নের অনন্তপুর গ্রামের মৃত সাদির খানের মেয়ে। থানা পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে জেলা সদর মর্গে পাঠিয়েছে।
শনিবার দিরাই পৌর শহরের মাদানী মহল্লা এলাকার মামার বাসার সামনে আম গাছের ডালের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে সোমা আত্মহত্যা করেন।
নিহতের পারিবারিক সুত্রে জানা যায়, দিরাই অনন্তপুর গ্রামের পিতৃহীন এতিম কিশোরী সোমাকে গত প্রায় তিন মাস পূর্বে গ্রামের তিন বখাটে তাজুল ইসলামের ছেলে সোহেল মিয়া, জহর মিয়ার ছেলে জাহাঙ্গীর ও খালেক মিয়ার ছেলে তানজিল সড়ক থেকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে সোহেলের বাংলাঘরে গণধর্ষণের চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে বখাটেরা ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে সোমাকে শারিরীকভাবে শ্লীলতাহানি করে।
ওই ঘটনায় তিনজনকে আসামী করে দিরাই থানায় ধর্ষণ চেষ্টার অপরাধে মামলা (মামলা নং জি আর ৫২/২০১৮) দায়ের করা হয়।
এদিকে মামলা দায়েরের পর থেকেই আসামীদের রক্ষায় উপজেলার রাজনগরের প্রভাবশালী ইউপি সদস্য লেবু মিয়া, ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি পরশ মিয়া ও হাদিছ মিয়া মামলা প্রত্যাহার করতে সোমা ও তার পরিবারকে অব্যাহত হুমকি প্রদানের পাশাপাশি নানাভাবে চাপ দিয়ে আসছিলেন। প্রভাবশালী মহলটি আসামীদের রক্ষায় এলাকায় সোমার বিরুদ্ধে নানা রকম কুৎসা রটনা করতেও পিছপা হননি।
নিহত সোমার ভাই সাইফুল ইসলাম খান শনিবার রাতে যুগান্তরকে জানান, আসামীদের পক্ষ নিয়ে প্রভাবশালী ও আসামীরা মামলা তুলে নিতে হুমকি-ধামকি দেয়ার পর মামলা তুলে না নেয়ায় সোমার বিরুদ্ধে এলাকায় নানা রকম কুৎসা রটনা শুরু করে। এ সময় সোমা গ্রামের বাড়ি ছেড়ে দিরাই পৌর শহরে মামার বাসায় আশ্রয় নেয়। কিন্তু লোকসমাজে কুৎসা রটানোর কারণে আমার বোন আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়।
অভিযোগ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে উপজেলার রাজনগর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য লেবু মিয়া ও ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি পরশ মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা উভয়েই শনিবার রাতে যুগান্তরকে বলেন, আমরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য কোন রকম চাপ বা হুমকি দেইনি বরং আমরা চেষ্টা করেছিলাম বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য।
এ বিষয়ে দিরাই থানার ওসি মো. মোস্তফা কামাল যুগান্তরকে বলেন, ‘মামলা প্রত্যাহারে নানামুখি চাপ ও হুমকির কারণে প্রাথমিক তদন্তে সোমাকে আত্মহত্যার প্ররোচনায় বাধ্য করার বিষয়ে সত্যতা পাওয়া গেছে, এর পেছনে যে বা যারাই জড়িত রয়েছে তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। সোমার আত্মহননের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হবে বলেও জানান পুলিশের ওই কর্মকর্তা।
যুগান্তর