ভোরের আভা ডেস্ক : কারাবন্দি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিয়ে উদ্বিগ্ন বিএনপি। এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে তিনি জামিন পাবেন বলে আশা করলেও চার মাসেও জামিন না পাওয়ায় হতাশ দলের নেতাকর্মীরা।
বিশেষ করে ঈদুল ফিতরের আগেই খালেদা জিয়া জামিন পাবেন বলে আইনজীবীদের আশ্বাসে আশান্বিত ছিলেন দলের সিনিয়র নেতারাও।
বৃহস্পতিবার উচ্চ আদালত ২৪ জুন পর্যন্ত জামিন আবেদন স্থগিত করে দেওয়ায় দলের চেয়ারপারসনকে নিয়ে দুর্ভাবনা বেড়েছে।
শুক্রবারও বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে খালেদা জিয়ার মামলার জামিন, শারীরিক অবস্থা এবং রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। ঈদের পর তাকে জামিনে মুক্ত করতে আইনি লড়াই আরও জোরদার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে। পাশাপাশি দলের সাংগঠনিক অবস্থা জোরদার করে রাজপথে আন্দোলনের কর্মসূচিও দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হয়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দীন রোডের কারাগারে বন্দি রয়েছেন খালেদা জিয়া।
এ বিষয়ে তার আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, খালেদা জিয়ার মামলার আইনি প্রক্রিয়ায় জামিনের জন্য তারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। নিম্ন আদালত সম্পূর্ণভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকায় জামিন মিলছে না। তাই তার মুক্তির একমাত্র পথ রাজপথ। এটা এখন তারা মর্মে মর্মে বুঝতে পারছেন। আইনি লড়াইয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি আসবে না। তার মুক্তি আসবে একমাত্র রাস্তায়। রাজপথের আন্দোলনে।
সূত্র জানায়, আইনি লড়াইয়ে যাতে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি না হয় সে ব্যাপারে সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করার সিদ্ধান্ত হয়। বিশেষ করে সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে জুনিয়র আইনজীবীদের দূরত্ব কমিয়ে আনার বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দেন নেতারা।
বিএনপির এক সিনিয়র নেতা বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা দিন দিন হতাশ হয়ে পড়ছেন। সরকারি মারপ্যাঁচের সঙ্গে বিএনপির প্রবীণ ও নবীন আইনজীবীরা সঠিকভাবে লড়তে পারছেন না বলেও মনে করেন তারা।
এদিকে বিকেল ৪টায় বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে খালেদা জিয়া ছাড়াও দলের সাংগঠনিক অবস্থান ও আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়। এর বাইরে আসন্ন তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ ও কৌশল নিয়েও আলোচনা করেন নেতারা।
এ ছাড়া ঢাকা মহানগরসহ প্রত্যেক অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের থানা-ওয়ার্ড কমিটি নিয়েও নিজেদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। এ সময় সম্প্রতি সারাদেশে নেতাদের সাংগঠনিক সফরের একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন তৈরি করেন বৈঠকে উপস্থিত নেতারা।
এই প্রতিবেদনে দলের ৭৮টি সাংগঠনিক ইউনিট কমিটির অবস্থান তুলে ধরাসহ তৃণমূল নেতাকর্মীদের মনোভাবের বিষয়টিকেও স্থান দেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর লন্ডনে যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সব কিছু ঠিক থাকলে রোববার তিনি লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। লন্ডনে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে।
বৈঠকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।
অন্য আইনজীবী ব্যারিস্টার নওশাদ জমির বলেন, উচ্চ আদালতের ১২০ বছরের ইতিহাসের ব্যতিক্রম ঘটেছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলায়।
তিনি বলেন, ৪৯৭ ও ৪৯৮ ধারার মামলায় আপিল বিভাগ হাইকোর্টের জামিন স্থগিত করেন, এমন নজির এর আগে কখনও ছিল না।
সমকাল