নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থগারের সামনে মানববন্ধনের প্রস্তুতি নেয়ার সময় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় রাবি শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া দিয়ে আন্দোলনকারীদের কয়েকজনকে চড়-থাপ্পড় ও লাঠি দিয়ে পেটানো হয়।
এসময় ধারালো অস্ত্র হাতে মহড়া দিতে দেখা যায় ছাত্রলীগের এক কর্মীকে। পুলিশের সামনেই ওই কর্মীকে লম্বা ছোরা প্রকৃতির ধারালো অস্ত্রটি নিয়ে ঘুরে বেড়াতে থাকেন। এসময় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
বেশকিছুক্ষণ ধরে ওই কর্মীকে অস্ত্র হাতে মহড়া দিতে দেখা গেলেো পুলিশ তার নিকট থেকে সেটি কেড়ে নেওয়ারো প্রয়োজন মনে করেনি।
এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার সময় ছাত্রলীগ কর্মীকে অস্ত্র হাতে দেখা যাওয়া ছবিটি আন্দোলনকারীদের ফেসবুক পেজেও শেয়ার করা হয়। এরপর ছবিটি ক্রমেই ভাইরাল হতে থাকে। তবে রাতে এই রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত ওই ছাত্রলীগ কর্মীর পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। যদিও তাকে রাবি ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গেই ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় অস্ত্র হাতে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকাল সাড়ে নয়টার দিকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে কয়েকজন শিক্ষার্থী ব্যানার নিয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিল। এসময় ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর নেতৃত্বে ৪০-৫০ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী সেখানে উপস্থিত হয়। এরপর তাদের ধাওয়া দিলে কয়েকজন গ্রন্থাগারের ভেতরে ঢুকে যায়।
কয়েকজকে গ্রন্থাগার চত্বর দিয়ে ধাওয়া দিয়ে চড়-থাপ্পড় মারা হয়। এরমধ্যে ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান সিনহা হাতে লাঠি ধারালো অস্ত্র নিয়ে নিয়ে ধাওয়া দিয়ে আব্দুল্লাহ শুভ ও অন্তর নামে দুজনকে মারধর করে।
মারধরের কারণে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় আন্দোলনকারীদের। পরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের ব্যানার নিয়ে চলে যায়। এরপর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পরিবহন মার্কেট দিয়ে শোডাউন দিয়ে পুনরায় গ্রন্থাগারের সামনে এসে অবস্থান নেয়। সেখানে কিছু সময় অবস্থানের পর নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে বাইক নিয়ে শোডাউন দেয়।
তবে ধাওয়া দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘আমরা কাউকে ধাওয়া দিইনি। স্বাভাবিকভাবে ক্যাম্পাসে শোডাউন দিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘যারা ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ওপর আস্থা রাখে না, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।’
কোটা সংস্কার আন্দোলন রাবি শাখার যুগ্ম-আহ্বায়ক মোর্শেদ আলম বলেন, ‘আমরা প্রায় দেড়শ’ জন মানববন্ধনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। তখন রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়ার নেতৃত্বে আমাদের ধাওয়া করা হয়। এসময় আমাদের পাঁচ-ছয়জন আন্দোলনকারীকে মারধর করেন।’
এর আগে শনিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কোটা সংস্কারের নামে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বিশৃঙ্খলা’ সৃষ্টিকারীদের প্রতিহত করা হবে বলে ঘোষণা দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু শনিবার রাতে তার ফেসবুকে লেখেন, ‘আগামীকাল (রোববার) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস-পরীক্ষা চলবে। কোটা আন্দোলনের নামে যদি কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করে, তাহলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ তা কঠোর হস্তে প্রতিহত করবে।