আভা ডেস্ক: বিএনপি চেয়ারপারসন কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নেওয়া হবে- এমন গুঞ্জন ছিল গতকাল রোববার দিনভর। গতকাল সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, চিকিৎসার জন্য তাকে বিএসএমএমইউতে নেওয়া হবে। এ কথার পর দুপুর আড়াইটা থেকে বিএসএমএমইউতে গণমাধ্যমকর্মীরা ভিড় করতে থাকেন। তবে গতকাল রাত পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়া হয়নি।
সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রও জানায়, প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউতে নেওয়া হবে। তবে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হবে না। উল্লেখ্য, বিএনপি খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউর বদলে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছে। তিনি নিজেও বিএসএমএমইউতে চিকিৎসা নিতে আগ্রহী নন বলে কারা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। যদিও তিনি তার অনাগ্রহের কোনো ব্যাখ্যা দেননি।
কারাগারের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ঠিক থাকলে আজকালের মধ্যে তাকে বিএসএমএমইউতে নেওয়ার সম্ভাবনা নেই। তা ছাড়া তাকে হাসপাতালে নেওয়ার কোনো নির্দেশনাও পায়নি কারা কর্তৃপক্ষ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা পেলেই কেবল তাকে হাসপাতালে নেওয়া হবে।
এদিকে গতকাল রোববার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, খালেদা জিয়া কারাগারে ভালো আছেন। প্রেশার ভালো রয়েছে। চলাফেরায়ও এখন পর্যন্ত কোনো অসুবিধা দেখা যায়নি। সরকার তার চিকিৎসার বিষয়ে শতভাগ আন্তরিক। তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) যথাযথ শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য কারা মহাপরিদর্শককে (আইজি প্রিজন) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাই এ ব্যাপারে বিএনপির অভিযোগ সঠিক নয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া কারাগারে হঠাৎ করেই অসুস্থতার কথা জানিয়েছিলেন। কারা ডাক্তার ও সিভিল সার্জন পরীক্ষা করে জানানোর পর আইজি প্রিজন পরামর্শ করে তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত নেন। আইজি প্রিজন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের কারাগারে নিয়ে গিয়েছিলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত ও কারা চিকিৎসকরা কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা জানিয়েছেন। এ জন্য তাকে বিএসএমএমইউতে পরীক্ষা করানো হবে। চিকিৎসকদের কাছে খালেদা জিয়া বলেছেন, তিনি হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়েছিলেন। তাই তার রোগ নির্ণয়ের জন্য কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার অনুরোধ করেছেন তারা। তাকে দুপুরে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এরপরও কখন, কোথায় তাকে পরীক্ষার জন্য নেওয়া হবে, তা আইজি প্রিজন নির্ধারণ করবেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার মাইল্ড স্ট্রোক হয়েছে কি-না তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বোঝা যাবে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপি খালেদা জিয়াকে বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তির সুপারিশ করে আসছে। তা উপেক্ষা করে বিএসএমএমইউতে কেন?- এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এখানে স্বনামধন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও গবেষকরা রয়েছেন। রয়েছে সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি। তা ছাড়া তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরাও রয়েছেন। সুতরাং এখানেই তার চিকিৎসা হবে। অন্য কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলেও তা সেখানকার চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী নেওয়া হবে।
এদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম গতকাল জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার সুগার লেভেল কমে গিয়েছিল। তার অজ্ঞান হয়ে পড়ার ব্যাপারে যে বক্তব্য তার আইনজীবীরা দিয়েছেন, তা সঠিক নয়।
কারাবিধি অনুযায়ী চিকিৎসা : কারাগারে বিএনপি চেয়ারপারসনের পড়ে যাওয়ার বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, খালেদা জিয়া রোজা রেখেছিলেন। রোজা রাখার পর বিকেল ৩টা-সাড়ে ৩টার দিকে হেলে পড়ে যাচ্ছিলেন। তার সঙ্গে থাকা ফাতেমা তাকে ধরে ফেলে। জেলের ডাক্তাররা তাৎক্ষণিক তাকে দেখেন। তিনি যেহেতু রোজা রেখেছিলেন, তার সুগার লেভেল কমে গিয়েছিল বলে তার চিকিৎসক জানিয়েছেন। একটা চকলেট খাওয়ার পর তা ঠিক হয়ে গেছে। কারাগারে কেউ অসুস্থ হলে কারাবিধি অনুযায়ী তার যে চিকিৎসা প্রয়োজন, সরকার তা নিশ্চিত করবে বলে আশ্বস্ত করেন আইনমন্ত্রী।
শনিবার খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চার চিকিৎসক কারাগারে গিয়ে তাকে দেখে আসেন। পরে তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, গত মঙ্গলবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ‘মাইল্ড স্ট্রোক’ হয়েছিল বলে তারা ধারণা করছেন।
সমকাল