নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজশাহীর পবা উপজেলাধীন বাগধানী এলাকায় অন্যের জমি জোড়পূর্বক দখল করে স্থাপনা নির্মাণ ও দোকানপাট তৈরি করে জোড়পূর্বক ভোগদখলের অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী দিনার হোসেন গত ১৬-৬-২০২৫ ইং তারিখে পবা থানা এবিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আওয়ামী সরকারের আমলে রাজশাহী-তানোর সড়ক ঘেষে অতিমূল্যবান ২১ শতক জমিটি রাজনৈতিক ক্ষমতা আর পেশিশক্তি প্রয়োগে কয়েক বছর ধরে দখলে রেখেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। অভিভাবকহীন ভুক্তভোগী পরিবারের সন্তানদের দেয়া তথ্য মতে, রাজশাহী সদর আসনের সাবেক এমপি ফজলে হোসেন বাদশার সহোযোগী ও সাবেক এপিএস মোঃ হিমেল ও বাগধানী এলাকার আওয়ামী নেতা মুসলেম হাজীর প্ররোচনা আর সহোযোগিতায় ঐ এলাকার বিশ থেকে ত্রিশ জন ভূমিদস্যু তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি জোড়পূর্বক দখলে রাখার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। থানায় করা অভিযোগে চারজনকে অভিযুক্ত করা হলেও পেছন থেকে কলকব্জা নাড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতারা বলে জানান অভিযোগকারী। অভিযুক্তরা হলেন, বাগধানী এলাকার মৃত নাজিমের ছেলে মোঃ আজাদ (৩২), মোঃ মোকছেদ আলীর ছেলে সিদ্দিকুর রহমান(৩২), মোঃ হাবিবুর রহমানের ছেলে আজিবর রহমান (৫৫), মোঃ লুতফর আলীর ছেলে নুরুল আলী নুরু (৩৭) ও আজিবর রহমানের ছেলে শাহিন আলী (২৮)। বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করেন ঐগ্রামের স্থানীয়দের অনেকেই। সরেজমিনে বিবদমান জমিটির কাছে গেলে বাগধানী মোড়ের ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান জানান, হিমেল ও মুসলেম হাজীর নেতৃত্বে অভিযুক্তরা জমিটির উপর একটি স্থাপনা নির্মাণ করেছে। গেল বছরের আগস্টের আগ পর্যন্ত হিমেল ও মুসলেম হাজী সহ অন্যরা এখানে নিয়মিত আসতো। বেশ কয়েক মাস ধরে তাদের দেখা যাচ্ছেনা। বিবদমান জমিটির সামনে চার-পাঁচটি দোকান বসিয়ে সেখান থেকেও তারা বছরের পর বছর ভাড়া উত্তোলন করছে।
অভিযোগকারী দিনার হোসেন জানান, ১৯৯৪ সালে নারগিস সাদিয়া বেগমের কাছ থেকে আমার বাবা আব্দুল হালিম মোট ২১ শতক জমিক্রয় করেন। ২০১৫ সালে বাবা আর ২০২৪ সালে মা রোকেয়া বেগমের মৃত্যুর পর পৈত্রিক সম্পত্তির দখল বুঝে নিতে গেলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও অভিযুক্তরা নিজেদের লোকজনের মাধ্যমে আমাদের বাঁধা দেয়। জমিতে আবারো পা রাখলে প্রাণে মেরে ফেলবে বলেও হুমকি ধামকি দেয়। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর পৈত্রিক সম্পত্তির দখল নিতে গেলে তারা আবারো আমাদের হুমকি ধামকি দিয়ে বলেন, আমাদের কাছে জমির কাগজ থাক কিংবা না থাক, এই জমি আমরাই ভোগ করবো। যা পারেন করেন। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা চেষ্টা করেও আমরা ব্যর্থ হয়েছি। ফ্যাসিস্ট সরকার পালিয়ে যাবার পর বিএনপি নামধারী গুন্ডাবাহিনী দিয়ে তারা তাদের অবৈধ দখল এখনো ধরে রেখেছে। বাবা-মার মৃত্যুর পর আমরা তিন ভাই বোন আরো নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। বাবা-মা জীবিত থাকাবস্থাতেও এই জমিটি আমরা দখলে নিতে পারিনি। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পরেও এখনো সেই আগের অবস্থাই বিরাজ করছে।
নওহাটা ইউনিয়ন ভীুম অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী বিবদমান জমিটি বাগধানী মৌজায় অন্তর্গত। যার জে.এল নং-১৪, হোল্ডিং নং-৮১৫, আর.এস খতিয়ান নং- ১৫৫, দাগ নং- ১৩৭। ১৩৭ নং দাগে কাগজে কলমে জমির বর্তমান পরিমাণ ২১.০০ শতক হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রায় সরকারি উন্নয়নমূলক কাজে উক্ত জমি থেকে ৮ শতক বা প্রায় ৫ কাঠার মতো জমি অধিগ্রহণ করেছে। বর্তমানে দখল হওয়া জমির মধ্যে ১৩ শতক বা ৮ কাঠা জমির বৈধ মালিক আমরা। জমি অধিগ্রহণ হলেও সরকার এখনো অধিগ্রহণকৃত জমির অংশ বিশেষ নিজ নামে মিউটেশন করেনি বিধায় পুরো ২১ শতক জমির খাজনা আমরা নিয়মিত দিচ্ছি। প্রস্তাবিত খতিয়ানের জাবেদা সকল প্রাপ্তির জন্য মৃত আব্দুল হালিমের ছেলে দিনার হোসেন রাজশাহী জেলা প্রশাসকের দপ্তরে একটি আবেদন করেছেন। যার ৭১১/৯-১/২০১৭-১৮নং খারিজ কেসে প্রস্তাবিত খতিয়ান নং- ২৫৬৮।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত আজাদ বলেন, তাদের কাছে কোন দলিলপত্র বা কাগজ নেই। বহুবছর ধরে জায়গাটা পড়েছিল বলে গ্রামের লোকজনের সম্মতিতে আমরা সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। পাঁচই আগস্টের আগপর্যন্ত মসজিদ তৈরির জন্য কয়েকটি পিলার নির্মাণ করা হয়েছে। এখন যদি অভিযোগকারির কাছে দলিলপত্র থাকে তাহলে তাদের জমি তারা বুঝে নিবে। আমরা তাদেরকে কোন বাঁধা বা হুমকি ধামকি দেয়নি। আমি আওয়ামী লীগকে ভোট দেই, সেটাই আমার দোষ। রাজশাহী সদর আসনের সাবেক এমপি বাদশার এপিএস হিমেল এর সাথে জড়িত কিনা জানতে চাইলে তিনি খোলাশা করে কিছু বলেননি।
স্থানটিতে মসজিদ নির্মাণ ও এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানতে স্থানীয়রা বলেন , এই এলাকায় শাহী জামে মসজিদ নামের একটি বিশালাকার মসজিদ আছে। যেখানে প্রায় চার থেকে পাঁচশ মুসল্লী একসাথে নামাজ আদায় করতে পারে। কিন্তু সেখানে এক কাতার মুসল্লী হতেই কষ্ট হয়। তাই এতোবড় একটি মসজিদ থাকার পরেও ডোবার ভেতরে কেনো বা কোন অভিপ্রায়ে তারা সেখানে মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিল সেটি বোধগম্য নয়।
অভিযোগের বিষয়ে পবা থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, এ জমি সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।