ভোরের আভা ডেস্ক: গতমাসের মাঝামাঝি হঠাৎ করে মাদকবিরোধী অভিযানে নামে সরকার। কঠোর এ অভিযান এখনও চলছে। এরইমধ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধেও বড় ধরনের অভিযানে নামার পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে। ঈদের পরই এ অভিযান শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অব্যাহত থাকবে খাদ্যে ভেজালবিরোধী অভিযানও।
আগামী নির্বাচন পর্যন্ত জনগণের সাধুবাদ পেতে পারে এমন কাজকে প্রাধান্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে যেসব অপকর্মের কারণে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও জনগণ উপকৃত হবে এমন পদক্ষেপ গ্রহণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। জনগণ যাতে সরকারকে আস্থায় নেয়, ভোট দেয় সেই চিন্তা থেকেই এ পরিকল্পনাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
সূত্রমতে, জনগণের বাহবা নিতেই হঠাৎ করে মাদকবিরোধী অভিযানে নেমেছে সরকার। এখন দুর্নীতির বিরুদ্ধেও অভিযানে নামার কথা ভাবা হচ্ছে। ক্ষমতাসীনরা বলছে, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান যেমন বাহবা কুড়িয়েছে, তেমনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযানে গেলেও সাধুবাদ পাওয়া যাবে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ঈদের পরই দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযানে নামার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। মাদকের মতো এই অভিযানেও কঠোরতা দেখাবে সরকার।
তবে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনের বাইরে আরও কোনও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া যায় কিনা সেই চিন্তা ভাবনাও চলছে। দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) কীভাবে আরও কার্যকর করা যায় ভাবা হচ্ছে সেটিও। একইসঙ্গে চলবে খাদ্যে ভেজালবিরোধী অভিযানও।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক মহলসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, জনগণের সমর্থন রয়েছে এমন কাজ করার দিকে এই মুহূর্তে সরকারের বেশি মনোযোগ রয়েছে। কারণ, সামনে ভোটের হিসেব কষতে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে।
তবে ওইসব ভালো কাজ বাস্তবায়নে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ যারা সরাসরি সম্পৃক্ত থাকবেন তাদের আরও দায়িত্বশীল হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে। কোনও অবস্থাতেই সরকারের এসব উদ্যোগ যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সেদিকে নজর রাখার কঠোর নির্দেশনাও থাকবে।
গত ২৬ মে টেকনাফে কমিশনার একরামুল হক টিটু র্যাবের ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ার পর চলমান মাদকবিরোধী অভিযান নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। একরামের বিষয়টিকে অনাকাঙ্ক্ষিত ধরে নিয়ে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা মনে করছেন, ওই ঘটনা সত্ত্বেও মাদকবিরোধী অভিযানে বিরাট জনসমর্থন পেয়েছে সরকার।
সরকারের দুজন মন্ত্রী বাংলা ট্রিবিউকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদকের বিরুদ্ধে যেমন জেহাদ ঘোষণা করেছেন, তেমনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে বড় অভিযানে নামার আগ্রহ দেখিয়েছেন। এ অভিযানে নামার আগে তিনি সংশ্লিষ্টদের কাছে কৌশল কী হতে পারে তা জানতে চেয়েছেন। দুর্নীতিবাজদের তালিকা করার কাজও চলছে। এর আগে এরকম তালিকা বেশ কয়েকবার করা হলেও এগুলো এখন ফের যাচাই বাছাই করার কাজ চলছে। যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে সংশোধিত তালিকা হাতে নিয়েই অভিযান শুরু করার কথা রয়েছে। ঈদের পরেই এই অভিযান শুরু হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানান ওই মন্ত্রীরা।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর গুরুত্বপূর্ণ তিনজন নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদকের মতোই দুর্নীতি রোধের বিষয়েও অনড় অবস্থানে রয়েছেন। তিনি সরকার ও দলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় তা নিয়ে কথা বলেছেন। দুর্নীতি যেভাবে রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়েছে এর বিরুদ্ধে সরকারের ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন প্রধানমন্ত্রী। ফলে ঈদের পরই এমন অভিযান শুরু হতে পারে বলে মনে করছেন এই নেতারা।
বাংলা টিউবুন