কুমিল্লার দুই মামলায় হাইকোর্টের দেয়া জামিন আপিল বিভাগে স্থগিত হওয়ার মধ্য দিয়ে ঈদুল ফিতরের আগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তির বিষয়টি আটকে গেল।
আদালতের নির্দেশানুযায়ী, দুই মামলার জামিনের বিষয়ে আগামী ২৪ জুন পরবর্তী শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
ফলে এর আগে কারাগারেই থাকতে হবে সাড়ে তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরাতন কারাগারে বন্দি খালেদা জিয়াকে।
আর বাংলাদেশে গত ১৮ মে থেকে পবিত্র রমজানের রোজা শুরু হয়েছে। এ হিসাবে আগামী ১৬ বা ১৭ জুন পবিত্র ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হবে।
ফলে খালেদা জিয়ার ঈদ কাটবে কারাগারে এবং ঈদের এক সপ্তাহ পর তার জামিন আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
উল্লেখ্য, গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি নেত্রীকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বকশীবাজারের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালত।
দুপুরে রায় ঘোষণার পর আদালতের পাশের পুরাতন কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় খালেদা জিয়াকে।
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশের অন্যতম প্রধান বিরোধী বিএনপির এ চেয়ারপারসন আইনি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে মুক্তি পাবেন বলে আশাবাদী ছিল তার দল।
নানা আইনি প্রক্রিয়া শেষে গত ১২ মার্চ খালেদা জিয়াকে হাইকোর্ট চার মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন।
আদালত আদেশে বলেন- খালেদা জিয়ার বয়স, শারীরিক অসুস্থতা, সাজার পরিমাণ, নিয়মিত বিচারিক আদালতে হাজিরা এবং মামলার পেপারবুক এখনও প্রস্তুত না হওয়ায় জামিন মঞ্জুর করা হল।
তবে এর পর দিনই আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদক। ওই দিন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী জামিন আদেশ স্থগিত না করে আবেদন দুটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।
১৪ মার্চ চার মাসের জামিন দিয়ে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ ১৮ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত করেন আপিল বিভাগ। ওই সময়ের মধ্যে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত আপিলের আবেদন (লিভ টু আপিল) করার নির্দেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত।
পরে গত ১৬ মে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের করা আবেদন খারিজ করে খালেদা জিয়ার জামিন বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।
এ ছাড়া বিচারিক আদালতের দেয়া দণ্ডের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে খালেদা জিয়ার আপিল আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত।
সুপ্রিমকোর্টের এ রায়ের ফলে কারাবন্দি খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল।
তবে ওই দিনই এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে এখন ৬টি মামলায় শোন অ্যারেস্ট দেখানো আছে। সেই মামলাগুলো নিয়ে আমরা হাইকোর্টে মুভ করব। আইনজীবীদের সঙ্গে আলাপ করেছি। আমরা প্রত্যাশা করছি, আগামী ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যেই ওই সব মামলায় জামিন পাওয়া যাবে।’
এর পর গত ২০ মে কুমিল্লার নাশকতায় দুটি ও নড়াইলের মানহানির একটি মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন আইনজীবীরা।
গত ২১ মে বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ কুমিল্লার দুই মামলায় খালেদা জিয়ার ছয় মাসের জামিন দেন। আর একই বেঞ্চ নড়াইলের মানহানির একটি মামলায় তার আবেদন খারিজ করেন।
তবে এদিন দুপুরেই হাইকোর্টের দেয়া ছয় মাসের জামিন স্থগিত চেয়ে চেম্বার আদালতে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
পর দিন চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী খালেদা জিয়ার জামিন আদেশ স্থগিত করে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।
আজ বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ কুমিল্লার দুই মামলায় খালেদা জিয়াকে দেয়া হাইকোর্টের জামিন ২৪ জুন পর্যন্ত স্থগিত করার আদেশ দিয়েছেন।
এদিকে গতকাল বুধবার মানহানির মামলায় নড়াইলের জেলা ও দায়রা জজ শেখ আব্দুল আহাদের আদালতে জামিনের আবেদন করেছিলেন খালেদা জিয়া। এ আবেদনের ওপর আগামী ৫ জুন শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত।
এ ছাড়া গত ২২ মে বাংলাদেশের মানচিত্র, জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত এবং মিথ্যা তথ্য দিয়ে জন্মদিন পালনে অভিযোগে ঢাকায় করা দুই মামলায় খালেদা জিয়া হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেছিলেন।
এ দুই মামলায় বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের আজ আদেশ দেয়ার কথা রয়েছে।