আভা ডেস্ক: সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য পাকিস্তানকে আরো বেশি তৎপর হতে হবে, আর না হলে আন্তর্জাতিক কালো তালিকায় তার নাম উঠবে – দেশটির ওপর এরকমই চাপ দিচ্ছে একটি বৈশ্বিক নজরদারি সংস্থা।
লাহোর থেকে সাংবাদিক-লেখক আহমেদ রশিদ এক রিপোর্টে লিখছেন, সন্ত্রাসবাদের জন্য অর্থ জোগানদাতাদের ওপর নজর রাখে এমন এই বৈশ্বিক নজরদারি প্রতিষ্ঠানটি হচ্ছে ফিনান্সিয়াল এ্যাকশন ট্রাস্ক ফোর্স(এফএটিএফ)।
এ মাসেই শেষ দিকে তারা এমন একটি বৈঠকে বসবে – যেখানে পাকিস্তানকে ‘ধূসর তালিকায়’ অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে – যা নিষেধাজ্ঞা আরোপের পথে প্রথম ধাপ।
পাকিস্তান যদি সন্ত্রাস নির্মূল না করে তাহলে তাকে কালোতালিকাভুক্ত করা হতে পারে, এবং তার পরিণামে আরোপ করা হতে পারে অত্যন্ত কঠোর সব শাস্তিমূলক পদক্ষেপ।
এই বৈঠকে পাকিস্তানকে দুটি গোষ্ঠীর জঙ্গীদের বিরুদ্ধে প্রকৃত অভিযান চালানোর সাক্ষ্যপ্রমাণ দিতে হবে। তা নাহলে তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ধূসর তালিকায় চলে যাবে।
এ দুটি গ্রুপ হচ্ছে লস্কর-ই-তাইয়েবার নেতৃত্বাধীন গ্রুপগুলো – যারা সীমান্তের ওপারে ভারতের লক্ষ্যবস্তুগুলোর ওপর আক্রমণ চালায়। আরেকটি হচ্ছে তালিবান ও হাক্কানি গ্রুপের নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠীগুলো – যারা আফগান ও মার্কিন বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালায়।
বহু দশক ধরে সন্দেহ করা হচ্ছে যে, পাকিস্তানের সামরিক ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো উগ্রপন্থী বিভিন্ন গ্রুপকে নিরাপদ আশ্রয় দিচ্ছে – যারা রাষ্ট্রের ভারতবিরোধী এজেন্ডা বা আফগানিস্তানে তাদের তালিবান মিত্রদের সমর্থন দেয়।
২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বরের হামলার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং নেটো দেশগুলো বহুবার প্রভাব খাটিয়ে বা হুমকির মাধ্যমে চেষ্টা করেছে – যেন ইসলামাবাদ এ গ্রুপগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু পাকিস্তান বরাবরই এ অভিযোগ জোরালোভাবে অস্বীকার করেছে এবং সেই চাপকে এড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে।
পাকিস্তান সরকার এবং সেনাবাহিনী সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেবার অভিযোগ জোরালোভাবে অস্বীকার করে বলেছে, পাকিস্তানি উগ্রপন্থী গ্রুপের আক্রমণে নিরাপত্তা বাহিনীর লোকেরাই বরং ব্যাপক প্রাণহানির শিকার হয়েছে – এবং এসব গ্রুপ আফগানিস্তান থেকে সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে ঢুকে আক্রমণ চালাচ্ছে।
এর মধ্যে আছে ইসলামিক স্টেট, পাকিস্তানি তালেবান এবং অন্যান্য কিছু গোষ্ঠী।
গত এপ্রিল মাসে প্যারিসে ৭০টিরও বেশি দেশের এক বৈঠকে সন্ত্রাসে অর্থদান ঠেকানোর ওপর এক বৈঠক হয় – যাতে অনানুষ্ঠানিকভাবে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর প্রতি সহিষ্ণুতা দেখানো বন্ধ করতে পাকিস্তানকে জুন মাস পর্যন্ত সময় দেয়া হয়।
এতে চীন, সৌদি আরব এবং তুরস্কও সমর্থন দেয় – যা পাকিস্তানকে বিস্মিত করে।
মে মাসে পাকিস্তান চরমপন্থীদের মোকাবিলার জন্য এফএটিএফএর কাছে কিছু নতুন প্রস্তাব দেয় এতে কি আছে তা গোপন রাখা হয়, কিন্তু পশ্চিমা কূটনীতিকরা বলেছেন তা হয়তো এফএটিএফকে সন্তুষ্ট করবে না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং নেটো বাহিনী পাকিস্তানের ভেতর দিয়ে তালিবানের রসদপত্র সরবরাহের পথ এবং এর নেতাদের আশ্রয়প্রশ্রয় পাবার বিষয়টির কড়া সমালোচক। কিন্তু পাকিস্তান এ অভিযোগগুলো অস্বীকার করে থাকে।
পাকিস্তান লশকর-ই-তৈয়বাকে একটি বৈধ রাজনৈতিক দল হিসেবে কাজ করতে দেবার প্রস্তাবও করেছে – যা আন্তর্জ্যাতিক সম্প্রদায় এবং বহু পাকিস্তানীর কাছেও গ্রহণযোগ্য হবে না।
লস্করের নেতা হাফিজ সাঈদকে ধরিয়ে দেবার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ১ কোটি ডলারের পুরস্কার ঘোষণা করেছে। কিন্তু তিনি পাকিস্তানে অবাধে বক্তৃতা দিয়ে থাকেন।
এফএটিএফ আরো একটি বিষয় দেখছে – যা হলো পাকিস্তান কিছুকাল আগে ২২টি আন্তর্জাতিক এনজিওকে নিরাপত্তা ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেশ ছাড়তে বলে। চাপের মুখে পাকিস্তান এখন এই নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনা করছে। বিবিসি বাংলা