মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প, মিরপুরের নিউ সি ব্লক ও ভাষানটেক এলাকায় মাদক ব্যবসা বন্ধ হয়নি।
পুলিশ সদস্যরাও স্বীকার করেছেন
বিশেষ অভিযানের কারণে রাজধানীতে এখন মাদক ব্যবসার ধরন পাল্টেছে
পুলিশ-র্যাবের বিশেষ অভিযানের কারণে রাজধানীতে এখন মাদক ব্যবসার ধরন পাল্টেছে। মুঠোফোনে ডেকে এনে কিংবা নিরাপদ কোনো স্থানে নিয়ে ক্রেতাদের হাতে মাদক তুলে দেন বিক্রেতারা। কড়াকড়ির কারণে ইয়াবার দামও আগের চেয়ে বেড়েছে। মাদকের স্পট হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প, মিরপুরের নিউ সি ব্লক, ভাষানটেক এলাকায় ২৪ ও ২৫ জুন সরেজমিনে ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে। এসব এলাকার পুলিশ সদস্যরাও স্বীকার করেছেন মাদক বিক্রি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়নি।
গত ৪ মে থেকে দেশজুড়ে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর মধ্যে ২৬ মে জেনেভা ক্যাম্পে প্রথমে অভিযান চালিয়ে ১৩ হাজার ইয়াবা বড়ি ও ৩০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে র্যাব। এর ২৪ দিন পর ২০ জুন পুলিশ সেখানে অভিযান চালিয়ে ৭০০ ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করে।
পুলিশ-র্যাবের অভিযানের পরও জেনেভা ক্যাম্পে মাদক ব্যবসা চলছে। ক্যাম্পের পাঁচজন দোকানি এবং স্থানীয় চারজন বাসিন্দা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, থানার কিছু পুলিশ সদস্যের সঙ্গে বড় মাদক ব্যবসায়ীদের সম্পর্ক রয়েছে। যে কারণে অভিযানের খবর আগেই পেয়ে যান তাঁরা। ক্যাম্পের বড় মাদক ব্যবসায়ীরা এখনো ধরা পড়েননি। মুঠোফোনে ক্রেতাদের ক্যাম্পে ডেকে এনে ইয়াবা তুলে দেওয়া হচ্ছে এখন। ক্যাম্পের এক মাদকসেবী জানান, আগে একটি ইয়াবা বড়ির দাম ছিল ২৫০-৩০০ টাকা। এখন ৪০০ টাকা।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, ক্যাম্পের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ইশতিয়াক ওরফে নাটু ইশতিয়াক, ইশতিয়াকের সহযোগী নাদিম ওরফে বোমা পঁচিশ, শেখ আরশাদ ওরফে গুরু আরশাদ, জয়নাল আবেদীন ওরফে পাঁচু, সেলিম আশরাফী ওরফে চুয়া সেলিম, ল্যাংড়া হীরা, আলমগীর, মনির, আরিফ, ট্যারা সেলিম, কুরবান, পাগলা আজাদকে এখনো ধরতে পারেনি পুলিশ। তাঁরাই ক্যাম্পের মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন।
মোহাম্মদপুর থানার ওসি জামালউদ্দিন মীর বলেন, অভিযান শুরু করার ২০-৩০ মিনিট আগে তা থানার সদস্যদের জানানো হয়। ক্যাম্পে খুচরা পর্যায়ে মাদক ব্যবসা হতে পারে। স্থানীয় বাসিন্দারা যাঁদের কথা বলছেন, তাঁরা তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী। তাঁরা ক্যাম্পে থাকেন না। তাঁদের ধরার চেষ্টা চলছে।
থানার কাছে মাদক ব্যবসা
রাজধানীর শাহ আলী থানা থেকে ২০০ গজ দূরে রাইনখোলা বাজারের পেছনে নিউ সি ব্লক। স্থানীয় দুজন বাড়ির মালিক ও তিন ব্যবসায়ী প্রথম আলোকে বলেন, সন্ধ্যার পর অপরিচিত যুবকেরা গলিতে ভিড় করে। তাদের অনেকে মাদকের ক্রেতা। রাস্তায় খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে মাদক কিনে দ্রুত সরে যায় তারা। এলাকার অনেকেই এটি জানে। অভিযানের পরও এটি বন্ধ হয়নি। ওই দুজন বাড়ির মালিক ও দোকানিরা বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৯৩ নম্বর ওয়ার্ডের একজন নেতা এবং শাহ আলী থানা আওয়ামী লীগের একজন নেতার প্রশ্রয়ে নিউ সি ব্লক, বাঁশপট্টি ও কমার্স কলেজের পাশের গলিতে মাদক ব্যবসা চলে। ।
শাহ আলী থানার ওসি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, নিউ সি ব্লক এলাকার বাড়ির মালিকদের নিয়ে ২৩ জুন উঠান বৈঠক করেছেন তাঁরা। মালিকেরা মাদক ব্যবসায়ীদের বাসা ভাড়া না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ভাষানটেকে মাদক ব্যবসা চলছে
অভিযান চললেও ভাষানটেকের ১ নম্বর বস্তি ও সাগরিকা বস্তিতে ইয়াবা-ফেনসিডিলের ব্যবসা বন্ধ হয়নি। মোর্শেদা বেগম নামের এক নারী এখানকার মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের এই বক্তব্য অস্বীকার করেনি পুলিশ।
ভাষানটেক থানার ওসি মীর ছাব্বির আহম্মদ বলেন, মোর্শেদাকে গ্রেপ্তারের জন্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু তাঁকে ধরা যায়নি।
আদালতের নির্দেশে ভাষানটেকের মাদক ব্যবসা নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সাম্প্রতিক এক তদন্তে উঠে এসেছে, স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী নুর হোসেন মাদক ব্যবসায় মদদ দিচ্ছেন।
পুলিশের পল্লবী-কাফরুল অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মো. জাকির হোসেন বলেন, মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ভাষানটেক থানার কমিউনিটি পুলিশিং কমিটি থেকে নুর হোসেনকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
প্রথম আলো